মিয়ানমার কথা রাখেনা
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ- মিয়ানমার বৈঠকে ঢাকার সকল প্রকার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে দেশটির কর্মকর্তারা, প্রতিশ্রুতি দেয় তাদের ফিরিয়ে নিতে। তারপর বৈঠক শেষে সব কিছু ভুলে যায়।
বৃহস্পতিবার ( ১৭ মে) বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠকে দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে তাগাদা দেয়া হয়েছে। এবারও তারা মনোযোগ দিয়ে সব কিছু শুনেছে। অতিসত্ত্বর রোহিঙ্গা ফেরাতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ শংকিত এবারও সব ভুলে গিয়ে নিরব হয়ে যাবে মিয়ানমার।
বৈঠকে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা বার্তার কাছে এমনই মনোভাব প্রকাশ করেছেন। বৈঠকটি ঢাকার রাষ্ট্রীয় এক অতিথি ভবনে বৃহস্পতিবার (মে ১৭) দিনব্যপী অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষ হাতে হাত রেখে প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করছি। এনিয়ে আরো কাজ বাকি আছে। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ তা চিহ্নিত করে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে জানাব। প্রক্রিয়া শেষ হলেই শুরু হবে প্রত্যাবাসন।
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, সব সময় প্রত্যাবাসন একটি জটিল প্রক্রিয়া। ‘প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে বৈঠকে আলাপ হয়েছে। প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা একটি তালিকা পাঠিয়েছিলাম, ওই তালিকা ভেরিফাই করতে কী সমস্যা হয়েছে, আজকের বৈঠকে তা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জেনেছি, আরো কী প্রয়োজনীয় বিষয় বাকি আছে, সেগুলো নিয়েও কথা বলেছি। দুই পক্ষই খোলামেলা আলোচনা করেছি। আস্তে আস্তে ওনারা (মিয়ানমার) ভেরিফাই করে দেখবে, এভাবেই প্রত্যাবাসন হয়।’
বাংলাদেশ-মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম বৈঠকটি গত ১৫ জানুয়ারি নেপিডোতে অনুষ্ঠিত হয়।
যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠকে ঢাকার পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে, মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে নেপিডোর পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮ হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা ঢাকার পক্ষ থেকে নেপিডোকে দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমার প্রত্যাবাসন বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে গত ২৩ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে গত ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়।
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে গত ডিসেম্বর নেপিডোর সঙ্গে স্বাক্ষর করা চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, ‘৯ অক্টোবর ২০১৬ এবং ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালের পর যে সকল রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদেরকে ফেরত নিবে মিয়ানমার। চুক্তি স্বাক্ষরের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও প্রত্যাবাসন একই জায়গায় আটকে রয়েছে।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন শুরু হলে প্রাণ বাচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখেরও বেশি মানুষ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে মিয়ানমারের নাগরিক প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
কেজেড /