বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দশদিনব্যাপী সুলতান মেলা শুরু হচ্ছে রোববার (৩মার্চ)। শহরের সুলতান মঞ্চে মেলা চলবে ১২ মার্চ পর্যন্তু। এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মেলার সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। মেলার উদ্বোধন করবেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া।
এদিকে সুলতান মেলাকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে স্টল নিয়ে এসেছেন দোকানিরা। সুলতান মেলায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে সংগীত পরিবেশনের জন্য স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু বলেন, দশদিনব্যাপী সুলতান মেলায় জেলার ৩৮টি সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশগ্রহন করবে। ইতিমধ্যে আমাদের সংগঠনগুলোর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মিকু বলেন, রোববার (৩মার্চ) থেকে ১২ মার্চ পর্যন্তু সুলতান মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ বছর মেলায় শতাধিক স্টল রয়েছে বলেও জানান তিনি।
দশদিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, চিত্রপ্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কণ, কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, প্রতিদিন এস এম সুলতানের জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা, লাঠিখেলা, ভলিবল, কুস্তি, গ্রামীণ খেলাধুলা, সুলতান পদক প্রদান, প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠিত হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান। ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট তৎকালিন মহকুমা শহর নড়াইলের চিত্রা নদীর পাশে সবুজ শ্যামল ছায়া ঘেরা, পাখির কলকাকলীতে ভরা মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ মেছের আলি মাতা মোছাঃ মাজু বিবি। চেহারার সঙ্গে মিলিয়ে পিতা মাতা আদর করে নাম রেখেছিলেন লাল মিয়া। চিত্রশিল্পী এস, এম, সুলতানের ৭০ বছরের বোহেমিয়ান জীবনে তিনি তুলির আঁচড়ে দেশ, মাটি, মাটির গন্ধ আর ঘামে ভেজা মেহনতী মানুষের সাথে নিজেকে একাকার করে সৃষ্টি করেছেন “পাট কাটা”, “ধানকাটা”, “ ধান ঝাড়া”, “ জলকে চলা”, “ চর দখল”, “গ্রামের খাল”, “মৎস শিকার”, “গ্রামের দুপুর”, “নদী পারা পার”, “ধান মাড়াই”, “জমি কর্ষনে যাত্রা”, “মাছ ধরা”, “নদীর ঘাটে”, “ধান ভানা”, “গুন টানা”, “ফসল কাটার ক্ষণে” , “শরতের গ্রামীণ জীবন”, “শাপলা তোলা” মত বিখ্যাত সব ছবি।
১৯৫০ সালে ইউরোপ সফরের সময় যৌথ প্রদর্শনীতে তার ছবি সমকালনী বিশ্ববিখ্যাত চিত্র শিল্পী পাবলো পিকাসো, ডুফি, সালভেদর দালি, পলক্লী, কনেট, মাতিসের ছবির সঙ্গে প্রদর্শিত হয়। সুলতানই একমাত্র এশিয়ান শিল্পী যার ছবি এসব শিল্পীদের ছবির সঙ্গে একত্রে প্রদর্শিত হয়েছে। কালোর্ত্তীন এই চিত্রশিল্পী ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্স আর্টিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে রাষ্টীয় ভাবে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শিল্পী সুলতান মৃত্যুবরণ করেন।