স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার গৌরিপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আবুল হোসেনের। নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করা এই অকুতোভয় বীর সেনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান মৃত্যুর আগে।
২০০৪ সালে পুলিশের চাকরি থেকে অবসরে যান তিনি। ২০০৬ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেটভুক্তীকরণের জন্য বারবার আবেদন করেছেন। তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক আতাউল গণী ওসমানীর স্বাক্ষরিত দেশরক্ষা বিভাগের স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদ, স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রত্যয়ন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কালিয়া শাখার প্রত্যয়ন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিবের প্রত্যয়ন, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ থাকার পরও তিনি পাচ্ছেন না স্বীকৃতি।
বয়সের ভারে এখন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন আবুল হোসেন। তারপরও হাল ছাড়ছেন না। মৃত্যুর আগে শুধু মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকু পাওয়ার আশায় ঘুরছেন বিভিন্ন অফিসের দপ্তরে। এরই মধ্যে তিনি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়েও গিয়েছেন। মৃত্যুর আগে আদৌও স্বীকৃতি মিলবে কিনা এটাই এখন তার প্রশ্ন?
পুলিশের হেড কোয়াটার্স থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পুলিশ সদস্যদের জীবনী ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিত্তিক রচনাবলী ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৩৪ ও ৬৩৭ পৃষ্ঠায় তার ছবিসহ সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করারও নানা তথ্য-উপাত্ত রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের সাথে কথা হয় রাজবাড়ীর সজ্জনকান্দায় তার মেয়ের বাসায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'যুদ্ধের সময় আমাদের যারা ভাত রান্না করে দিত তারাও আজ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছে। অথচ আমি নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। আমার স্বীকৃতি মিলছেনা। আমি কোন ভাতা চায়না। আমি শুধু মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতিটুকু চায়। এটাই আমার শেষ চাওয়া।'
এ সময় তিনি আরো বলেন, '১৯৭১ সালে যুদ্ধে কমান্ডার অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ৮নং সেক্টরে নড়াইল, কালিয়া, ঝিনাইদহ ও খুলনাতে গ্রুপ কমান্ডার হিসাবে সরাসরি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। যেদিন দেশ স্বাধীন হলো সেদিন ১৩০ জন পাকিস্তানি সেনা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে। আমরা যারা এক সাথে যুদ্ধ করেছি তাদের মধ্যে নুরুল হক ফকির, হারুনুর রশিদসহ অনেকেরই নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শুধু আমারটা হয়নি।'
এ বিষয়ে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুদাকে প্রশ্ন করলে তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, ২০১৪ সালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। পরে মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি আসে। আর সেখানে লেখা থাকে, ওই তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা অতিরিক্ত হয়েছে। পুনরায় যাচাই-বাছাই করার জন্য মন্ত্রণালয় নির্দেশ দেন।
এই নির্দেশ দেওয়ার পর তখনকার যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ইমদাদ মোল্লা পুনরায় যাচাই-বাছাই না করার জন্য উচ্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার কারণে এখন পর্যন্ত বিষয়টি ওরকমই রয়েছে। বিষয়টি মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত এই উপজেলাতে আর নতুন করে কোন মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হতে পারছেনা।
এ সময় ইউএনও আরো বলেন, 'যেহেতু ২০১৪ সালের যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশে তার নাম রয়েছে সেহেতু বিষয়টি মীমাংসা হলেই আমরা আশা করছি সে গেজেটভুক্ত হবে।'