সাধারণ একটি ছোট রুমের চারপাশে সারি সারি শেলফ। আর তাতে সারি সারিভাবে রাখা ছোট বড় বিভিন্ন জাতের বোতল। সেসব বোতল জুড়ে নানা রকম, নানা বর্ণের পোকা।
যার সংগ্রহশালাতে রয়েছে প্রায় ১০০ জাতেরও বেশি পোকা। দৈনন্দিন কাজে এই পোকার প্রয়োজনীয়তা অনেক। উপকারী পোকা ছাড়াও ক্ষতিকর পোকা রয়েছে তার সংগ্রহশালায়।
সংগ্রহে থাকা পোকার মধ্যে ধানের মাজরা পোকা, লেডি বার্ড বিটল, গান্ধী পোকা, ক্যারাবিডল বিটল, ড্যামসেল ফ্রাই, বাদামী গাছ ফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা, সবুজ সুর লেদা পোকা, পামরী পোকা, ড্রাগন ফাই, মাকড়সা, কয়েক ধরনের প্রজাপতিসহ পোকায় আক্রান্ত বিভিন্ন গাছের পাতা, রোগে আক্রান্ত গাছ ও ফলের প্রায় ২০০ ধরনের নমুনা রয়েছে সেখানে। এছাড়াও এখানে সংগ্রহে আছে আবাদি জমির নানাবিধ আগাছা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ৭০ জাতের ধান। রয়েছে বিনা ও বারি উদ্ভাবিত ধানও। আছে এযাবৎ কালের কৃষি সংক্রান্ত সব বই, লিফলেট, কৃষি বিষয়ক সকল অনুষ্ঠানের ভিসিআর ও সিডি ভিডিও। বাদ যায়নি বিভিন্ন জাতের সারও।
আর এসব ব্যতিক্রমধর্মী জিনিসের সংগ্রাহক হলেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার দুল্লা ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা। দেশের কৃষকদের সেবা দেবার জন্য যিনি একেবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগেই গড়ে তুলছেন ব্যতিক্রম এ সংগ্রহশালা। শুধু সংগ্রহে সীমাবদ্ধ থাকেন নি, দিচ্ছেন সেবাও। সঠিক, সময়োপযোগী এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষকদের সেবা দিয়ে এলাকায় ইতোমধ্যেই ‘কৃষক বন্ধু’ উপাধি পেয়েছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
এলাকার কৃষকরা পরামর্শের জন্য এলে তিনি সংগ্রহশালার পোকাগুলো দেখিয়ে ফসল বা গাছের পোকা কিংবা কি ক্ষতি হচ্ছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হন এবং সে অনুযায়ী পরামর্শ দেন কৃষকদের। আর এই পুরো বিষয়টিকে তিনি ভালোবেসে নাম দিয়েছেন ‘পেস্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার।’
দেশের অনেক বড় বড় কোম্পানি বা কর্মকর্তারা যা করতে পারেনি, তিনি তা করে দেখিয়েছেন সহজেই। দীর্ঘ ২৯ বৎসরের চাকরি জীবনে অর্জন করেছেন অনেক নামিদামি স্বীকৃতি ও পুরস্কার। দুবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার, দুবার প্রযুক্তি সম্প্রসারণে বিভাগীয় জাতীয় পুরস্কার, বিভাগীয় ইনোভেশান পুরস্কারসহ মোট ২১ টি পুরস্কার লাভ করেন।
এমন ব্যতিক্রমধর্মী সংগ্রহের শুরুটা জানতে চাইলে সেলিম রেজা বার্তা২৪.কমকে জানান, চাকরিজীবনের শুরুতেই কৃষকের কিছু সমস্যা তাকে ভাবিয়ে তোলে। দেখা যেত তারা যে রোগ বা পোকা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটির সঠিক বর্ণনা দিতে বা দেখাতে পারতেন না। সেখান থেকেই তার মনে হতে শুরু হয়, এমন যদি কোনো ব্যবস্থা থাকতো যে কৃষকরা দেখেই তার সমস্যা চিনে ফেলতে পারবে। তারপর ১৯৯৮ সালে তিনি প্রথম একটি আলমারি নিয়ে শুরু করেন তার সংগ্রহের সূচনা। তখন তিনি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। প্রথম প্রথম তাকে নানা সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়। পরবর্তীতে সেগুলোর নানাবিধ সমাধানও তিনি নিজেই বের করেছেন।
বর্তমানে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার দুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি রুমে রয়েছে তার এ বিশাল সংগ্রহশালাটি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সেলিম রেজা বলেন, ‘আমার সংগ্রহশালাটি এখন একটি ছোট রুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ, এটিকে বড় পরিসরে ময়মনসিংহ শহরে স্থানান্তরিত করতে চাই এবং এটাকে দেশের সকল কৃষকের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে চাই। তাছাড়াও আরও বড় কিছু পরিকল্পনাও আছে এটিকে ঘিরে।'