ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মবার্ষিকী আজ

, শিল্প-সাহিত্য

নিউজ ডেস্ক, বার্তা ২৪ | 2023-09-01 13:07:59

বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বাংলালিপি প্রথম সংস্কার করেন তিনিই। ছিলেন বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক ও প্রাবন্ধিকও। তার আসল নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ তার জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা ভগবতী দেবী।

বিবিসি বাংলার 'সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে?' জরিপে শ্রোতাদের মনোনীত শীর্ষ বিশজন বাঙালির তালিকায় অষ্টম স্থানে আসেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করেছিলেন। এবং তিনি যে শুধু বাংলা ভাষাকে যুক্তিগ্রাহ্য ও সকলের বোধগম্য করে তুলেছিলেন তাই নয়, তিনি ছিলেন বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বাঙালি সমাজে প্রগতিশীল সংস্কারের একজন অগ্রদূত।

ঈশ্বরচন্দ্রের চার বছর ৯ মাস বয়সে সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায় শিক্ষাজীবন শুরু। পাঠশালার পাট চুকিয়ে বাবার সঙ্গে চলে যান কলকাতায়। ভর্তি হন কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজে। পাণ্ডিত্য অর্জন করেন ব্যাকরণ, কাব্য, অলংকার, বেদান্ত ও জ্যোতিষশাস্ত্রে। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য পান বিদ্যাসাগর উপাধি।

তার ‘বর্ণপরিচয়’ (১৮৫১) প্রকাশের আগ পর্যন্ত শিশু শ্রেণিতে এ ধরনের কোনো আদর্শ পাঠ্যপুস্তক ছিল না। দেড়শ বছর পর এখনো তার ওই বই মুদ্রিত হচ্ছে। বর্ণপরিচয়ের মতো সমান সাফল্য লাভ করেছিল ‘বোধোদয় (১৮৫১)’, ‘কথামালা (১৮৫৬)’, ‘চরিতাবলী (১৮৫৬)’ ও ‘জীবনচরিত (১৮৫৯)’।

সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা ও বর্ণপরিচয়ের মতো বই এর আগে বাংলা ভাষায় ছিল না। ব্যাকরণ নিয়ে চার খণ্ডে লিখিত ব্যাকরণ-কৌমুদীও তার ঐতিহাসিক অবদান। এ ছাড়া তিনি হিন্দি থেকে ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’, সংস্কৃৃত থেকে ‘শকুন্তলা’, ‘সীতার বনবাস’, ‘মহাভারতের উপক্রমণিকা’ এবং ইংরেজি থেকে ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’, ‘জীবনচরিত’ প্রভৃতি গ্রন্থ অনুবাদ করেন।

মানবিকতা ও দানশীলতার জন্য তিনি করুণাসাগর নামে পরিচিতি পান। তাকে এ নামে প্রথম ডেকেছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। এ ছাড়া মাতৃভক্তি ছিল তার চরিত্রের অন্যতম গুণ।

বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন নারীশিক্ষার বিস্তারের পথিকৃৎ। তিনি মনে করতেন, নারী জাতির উন্নতি না ঘটলে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির প্রকৃত উন্নতি সম্ভব নয়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উদ্যোগী হয়ে কলকাতায় যে হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেটিই ভারতের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়। বিদ্যাসাগর ছিলেন এই বিদ্যালয়ের সম্পাদক। এটি বর্তমানে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত।

১৮৫৭ সালে বর্ধমান জেলায় মেয়েদের জন্য তিনি একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং এক বছরের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে বাংলার বিভিন্ন জেলায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৩৫টির বেশি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

কলকাতায় উচ্চশিক্ষার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন যা বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের একদিকে ছিল যেমন অসাধারণ বুদ্ধি ও মেধা, অন্যদিকে ছিল চরিত্রের কঠোরতা এবং সংগ্রামী মনোভাব। ১৮৯১ সালের ২৯শে জুলাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনাবসান হয় কলকাতায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর