যেখানে অন্যায় সেখানেই তিনি। যেখানে অন্ধকার ও কুসংস্কার, সেখানেই আলোর মশাল হাতে তার দীপ্ত উপস্থিতি। বেগম সুফিয়া কামাল। ‘জননী সাহসিকা’ নামে সমধিক খ্যাত বাঙালির শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব তিনি।
বাংলাদেশে নারী প্রগতির শীর্ষ নাম বেগম সুফিয়া কামাল। একাধারে তিনি ছিলেন কবি, নারীনেত্রী ও নাগরিক আন্দোলনের অগ্রসেনানী। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ বিরোধী সংগ্রামে তার নাম উজ্জ্বল আখরে লেখা রয়েছে। অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রগতির মশাল হাতে কেটেছে তার পুরো জীবন।
বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির অধিকারের জন্য লড়েছেন বেগম সুফিয়া কামাল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত ছিল তার জীবন। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার পাশাপাশি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধেও ছিলেন স্বোচ্চার। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য সংগ্রাম করেছেন আজীবন।
শিশু-কিশোরদের প্রিয় খালাম্মা ছিলেন তিনি। জড়িত ছিলেন কচি কাঁচার আসরের প্রতিষ্ঠার সঙ্গেও। নিপীড়িতজন, নারী সমাজ এবং সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সব সময়। অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য তিনি ছিলেন জননীর আশ্রয় স্বরূপ। সকলের জন্যেই ভালোবাসার একটি বটবৃক্ষ ছিলেন তিনি ।
১৯১১ সালের ২০ জুন বেগম সুফিয়া কামালের জন্ম বরিশালে। জীবন কেটেছে কলকাতায় এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের ঢাকায়। লেখালেখি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক-নাগরিক আন্দোলনের ভেতর দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে তার জীবন। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা সম্মাননা ও পুরস্কার। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে পুরস্কারটি তিনি অর্জন করেছিলেন, তা হলো সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান। স্বকীয় কৃতিত্বে তিনি অর্জন করতে সক্ষম হন মানুষের শ্রদ্ধা ও প্রীতি।
মায়ের মতো স্নেহ দিয়ে মানুষকে বুকে টেনে নিয়েছেন তিনি। নারী প্রগতির জন্য লড়েছেন। সাম্প্রদায়িকতা, অন্ধকার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশের নারী জাগরণ ও সামাজিক অগ্রগতির সংগ্রামে বেগম সুফিয়া কামালে অবদান অপরিসীম। তিনি ছিলেন তার কালের বুদ্ধিবৃত্তির উজ্জ্বল তারকা। গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা।
১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর তিনি ঢাকায় পরলোক গমন করেন। রেখে যান তার অম্লান সাহিত্য ও সন্তানতুল্য অগণিত ভক্ত ও অনুসারী। মাতৃরূপী স্বিগ্ধ অভিব্যক্তিতে তিনি অম্লান হয়ে রয়েছেন সবার মনের মণিকোঠায়। স্মরণের আলোয় রয়েছেন চির জাগরিত। রয়েছেন সকলের চিত্তে ইতিবাচক আশা জাগানিয়া পরশে।
বেগম সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকীতে বার্তা২৪-এর বিনম্র শ্রদ্ধা।