জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিভৃতপল্লীর এক নিভৃতচারি শিশুসাহিত্যিক

, শিল্প-সাহিত্য

ইজাজ আহমেদ মিলন, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক | 2023-08-31 03:56:59

নিভৃত এক পল্লীর সাহিত্য সাধক জয়নুল আবেদীন স্বপন। শিশুদের মনোজগত তরজমা করে সুদীর্ঘকাল ধরে সাহিত্যচর্চা করে চলছেন নিভৃতচারি এ  শিশুসাহিত্যিক।

কোনো এক বর্ষায় পাল তোলা নৌকায় চড়ে শিশু কন্যাকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন য়নুল। হঠাৎ করেই নৌকা থেকে নদীর গভীর জলে পড়ে যায় তার কন্যা। চোখের সামনে নিজের কন্যার এমন নির্মম বিদায় জয়নুলকে পৃথিবীর সমস্ত কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। একদম নিশ্চুপ হয়ে যান।

স্কুল জীবন থেকে গল্প কবিতা লেখা শুরু তার। কন্যার এমন প্রস্থানে দীর্ঘ বিরতির পর গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি লিখছেন শিশুদের জন্য।

‘চাঁদের হাসি’ নামে তার এক ছড়ার বইয়ের ভূমিকায় কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘জয়নুল আবেদীন স্বপনের ছড়ার সাথে আমি পরিচিত অনেক আগে থেকেই। এক সময় তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত ছাড়া লিখতেন। ব্যক্তিগত একটি ট্র্যাজেডি তার লেখালেখি থামিয়ে দেয়। দীর্ঘ বিরতির পর আবার তিনি লিখতে শুরু করেছেন। এই বইতে ছাড়াকার জয়নুল আবেদীন স্বপন শিশু কিশোরদের সুন্দর ও সঠিক পথ দেখাতে চেয়েছেন। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে স্পষ্টভাবে করেছেন সমর্থন। ছড়াগুলো পাঠ করে মনে হয়েছে বৈষম্যহীন ও ক্ষুধামুক্ত একটি সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নে বিভোর এই ছাড়াকার। ’

বছর দুই আগে জয়নুলের লেখা ‘ অজানা এক রহস্যপুরী’শীর্ষক গ্রন্থে’র মোড়ক উন্মোচন করতে এসে খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক ও বর্তমান বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন বলেছিলেন, ‘স্বপন শক্তিমান এক লেখক। গল্প লেখার ধরণ দেখে মনে হয়েছে তিনি শিশুদের মনের কথা বুঝেন।’

‘মুজিব আমার হৃদয় জুড়ে/কথা বলার জোর/মুজিব ছিল এই দেশে তাই/রাতের শেষে ভোর’ কিংবা ‘মায়ের চোখের জল যেন- নদীর চেয়েও বেশি/রক্ত, লাশে বাতাস ভারি- কাঁপছে জোরে পেশি ’ অথবা ‘ একটা মেয়ে পথে পথে কাগজ তুলে রোজ/ তোমরা কি কেউ দেখো তাকে, রাখো কি কেউ খোঁজ ’ এ রকম অসংখ্য পঙক্তির স্র্রষ্টা শিশু সাহিত্যিক জয়নুল আবেদীন স্বপন। তার লেখা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ছোটদের সুন্দর ভবিষ্যৎ, চাঁদের হাসি,ঘুরে দাঁড়াবার সাহস তুমি, ক্ষুদে বুদ্ধিমান প্রাণী ,অনাদরে ফোটা বুনোফুল,ও অজানা এক রহস্যপুরী ইত্যাদি।

তার প্রকাশিত গ্রন্থে’র সংখ্যা ৮। শিশুদের পাঠোপযুগী করে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে তিনি একটি বই রচনা করেছেন। বইটি পাঠকের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

গাজীপুর জেলায় শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের প্রকৃতির মমতায় সাজানো লাল মাটির উর্বর ভূমি ভেরামতলী গ্রামে ১৯৬৬ সালের ৫ মার্চ তার জন্ম। একদিকে ঘন গজারি বন অন্যদিকে ছোট শালদহ নদী ঘেঁষা ভেরামতলী গ্রামের প্রকৃতিই তাকে লেখালেখির উৎসাহ জুগিয়েছে।  প্রকৃতির সঙ্গে জড়াজড়ি করে বেড়ে উঠা জয়নুল পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। আজ তার ৫৬ তম জন্মদিন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর