‘জিন্দা দেহে মুরদা বসন, থাকতে কেনো পরনা। মন তুমি মরার ভাব জান না, মরার আগে না মরিলে পরে কিছুই হবে না।” “কী মজার ঘর বেঁধেছে, হায়রে ঘর বাইন্ধাছে, দুই খুঁটির উপর’ এমনই অসংখ্য দেহতত্ত্ব, জারি, বাউল ও মারফতি গানের স্রষ্টা মরমি কবি পাগলা কানাইয়ের ১৩০ তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ শুক্রবার । লোক-সাধনা ও মরমি সংগীতের এ কবি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামে বাংলা ১২১৬ সালের ২৫ ফাল্গুন জন্মগ্রহণ করেন এবং আজকের এই দিনে বাংলা ১২৯৬ সালের ২৮ আষাঢ় তিনি ইন্তেকাল করেন।
কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জন্মভিটা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামে পাগলা কানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কবির মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা। এছাড়াও রয়েছে বই পাঠ প্রতিযোগিতা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও আবৃতি প্রতিযোগিতা।
জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই তিনি দূরন্ত ও আধ্যাত্মিক স্বভাবের ছিলেন। বাল্যকালে পিতৃহারা পাগলা কানাই এর ঘরে মন না টেকায় ও অর্থের অভাবে পড়ালেখা হয়নি। তিনি অন্যের বাড়িতে রাখালের কাজ করেছেন। গরু চরাতে গিয়ে ধুয়ো জারি গান গাইতেন। নিরক্ষর হলেও তার স্মৃতি, মেধা ছিল প্রখর। তিনি উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গান রচনা করে নিজ কণ্ঠে পরিবেশন করতেন। তার সংগীতে তিনি যেমন ইসলাম ধর্মের তত্ত্বকে প্রচার করেছেন তেমনি হিন্দু-পুরাণ রামায়ণ ও মহাভারত থেকেও নানা উপমার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। এ কারণেই তার গান সর্বজনীনতা লাভ করে। তার মধ্যে বাউল ও কবিয়াল এ দুয়ের যথার্থ মিলন ঘটেছে।
পাগলা কানাই এর গান গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এ পর্যন্ত পাগলা কানাই রচিত গানের মধ্য মাত্র তিনশ সংগৃহীত হয়েছে। মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন, ড. মাজহারুল ইসলাম, আবু তালিব, আমিন উদ্দিন শাহ, দুর্গাদাস লাহিড়ী, উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যসহ অনেক মনীষী পাগলা কানাইয়ের গান সংগ্রহ ও গবেষণা করেছেন।