আনিসুজ্জামান সোহেলের একগুচ্ছ কবিতা

, শিল্প-সাহিত্য

আনিসুজ্জামান সোহেল | 2023-08-22 13:11:22

কেউ আসেনি, আসবেও না জানি

যে দূরে থাকে তার স্মৃতি কাছে থেকে যায়
যে আসেনি, আসবেও না জানি
তার মায়া শুধুই পথ আগলে থাকে।
ভেঙে যাবে জেনেও
নির্জনে আমি কী গড়তে বসি, ভুলে যাই।
ভেঙে যাওয়া খুব সহজাত।
কোন পথে, কার আবছা ভ্রমণ দেখবার জন্য
আমার এই পর্যটক মন?
লুকিয়ে থাকা মায়া উঁকি দেয়।
ঠোঁট থেকে পালানো চুমু
বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়।
হাত থেকে ফসকে যাওয়া স্পর্শ
দীর্ঘশ্বাসে মিলিয়ে যায়।
আমার দিকে তাক করে থাকা বাতিগুলো
নিভে যাক। অন্ধকার আমার চেনা।
তোমার আলোয় কখনো কখনো
মুখ পুড়ে যায় আমার।

ব্লটিং পেপার দরকার

তোমার হাতব্যাগে ব্লটিং পেপার হবে?
আমার শরীরে লেগে থাকা
বিষণ্ণ স্মৃতিগুলো শুষে নিতে যদি।
প্যান্ডোরার বাক্স থেকে
জগতের সব রাগ, দুঃখ, কষ্ট, হতাশা
আমার জামার ভেতরেই ঢুকে পড়ল নাকি?
হারিয়ে যাওয়া হরিণ খুঁজতে খুঁজতে
অরণ্যের গভীর নির্জনতায় ঢুকে পড়েছি
শহরজুড়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে শত শত
সাবান আর টয়লেট পেপারের তৈরি নকল মানুষ
আলকেট্রাজের কয়েদীরা পালিয়ে গ্যাছে কবে
বেঁচে থাকার দীর্ঘশ্বাস ক্রমশ দীর্ঘ হতে থাকে
মৃত্যু ধেয়ে যায় আরেক জন্মের দিকে

সন্ধ্যার অনিবার্য বিপদ

সন্ধ্যার অতলে চোখ খোয়ালাম বুঝি
তোমাকে দেখে। আর কিছু চাই?
আমার পালক খসিয়ে নিতে পারো চাইলে।
আত্মার প্রতি পৃষ্ঠার জেরক্সে কপি
গুঁজে দেবো তোমার হাতে, আবার দেখা হলে।
বোকা অবুঝ স্বপ্নের কী এমন দাবি
আমার কাতর বিবিক্ষা তুমি জানো
চুমু হৃৎপিণ্ডের জন্য ভালো
উৎসবের রাতে দরদাম করতে নেই
জোৎস্নারাতে উড়তেও পারে কাগজের পাখি।
ফুলস্কেপ শাদা কাগজকে
জলরঙের আদর—এঁকে দিলো গুচ্ছ মেঘ,
গাঙশালিকের উড়ে যাবার দৃশ্য।
তৃপ্তিহীন ক্ষুধা বুকের বালিশে তুলো ভেজায় রোজ
মনে হয় কানাগলিতে ঢুকে পড়েছি
মাতাল ভাবছো আমাকে?
তুমি নিজেই তো আফিম মেখে আছো

ভেজা ভেজা ম্যানুস্ক্রিপ্ট

মৃত নগরের পথিকের ছায়ার মতো
বিপন্ন নিজের ছায়া। মগজে কিছু নীল জটিলতা।
হাওয়ায় ভেসে আসা চিঠিটা কার?
কাগজের বুকজুড়ে অচেনা বর্ণমালার গোলকধাঁধা
তুমি কি পাঠিয়েছো? পাঠিয়েছিলে?
রহস্যময় ভয়নিক ম্যানুস্ক্রিপ্টের মতো!
এইসব অমীমাংসিত রহস্য, লুকানো সন্তাপ।
জানি আমার আত্মার কিছু পৃষ্ঠা
আবিষ্কৃত হবার আগেই হারিয়ে যাবে।
বাকি পৃষ্ঠাগুলোর কার্বন ডেটিংয়ের ফলাফল
জানিয়ে দেবে আমার লুকানো বিবিক্ষার কথা।
মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনে শুধু প্রতীক্ষা।
হয়তো হঠাৎ করেই অদ্ভুত কোনো সংকেত
পেয়ে যাব ঠিক। পৃথিবীর ভেতর থেকে নয়।
তোমার তারাভরা মহাকাশ থেকে।
পাল্টা সংকেত আমিও লুকিয়ে রেখেছি বুকে
তোমার সজল আখিঁর লুকানো ম্যানুস্ক্রিপ্ট!
পড়ে ফেলব ঠিক যে কোনো সন্ধ্যায়।

শীতসন্ধ্যার মসৃণতা

মিউজিয়ামে সাজানো একটি বিলুপ্ত
নিয়ান্ডারথালের ফসিল।
বরফযুগের শীতল জলবায়ুতেও
ওরা কী করে প্রেম করত?
রিক্সায় অনেক শীত ছিল কাল।
আমি অন্ধ হয়ে যাবার পরও
তোমার হাতব্যাগে কি লিপস্টিক থাকবে?
যুবতী মেঘগুলোকে যেভাবে বুক পেতে দেয় নদী
ইচ্ছে করে সেভাবে চিত হয়ে শুয়ে থাকি।
একটা নদী সমুদ্র দেখতে চায়নি
তোমাকে ছুঁয়ে দেখেছে বলে।
ভায়োলিন বাজানো আবার শুরু করো।
আমি খুব যন্ত্রণাকাতর, তবুও সুর ভালোবাসি
উচ্চতর গণিত তেমন শেখা হয়নি আমার
তোমার প্রতি পৃষ্ঠায় এত অ্যালজাবরা কেন?
আমি একটা ক্ষত পাহাড়ের মসৃণতা
খুঁজতে চেয়েছিলাম বহুকাল ধরে
একটি ঋজু ঝর্ণা প্রায়শই আমায় ডাকে
তোমাকে ছোঁয়ার পর
আমার করতলে ঘাসফুল গজায় রোজ
তোমাকে শুভরাত্রি বলা দিন
আমার কখনোই ভালো লাগে না। 

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

এ সম্পর্কিত আরও খবর