তোমার রক্তিম অবিনাশী সংকর শরীর

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

ফাহমিদা জামান ফ্লোরা | 2023-09-01 12:19:14

বলে দিও তারে

বলে দিও তোমার প্রেমিকাকে
আমি প্রেমে পড়েছি তুমুলবেগে
তোমার না, অন্য এক পুরুষের।
ওই যে, যারে তুমি দেখছিলে শাহাবাগে
আমার হাত নিয়া খেলতে, দুলাইতে, নাচতে, হাঁটতে।

একা থাকি আমি, একা বিড়ি খাই
একা মদ খাই, একা গল্প করি
একা বাজার করি, গৃহস্থ করি
অফিস করি, বিশ্ববিদ্যালয় করি
একা লিখি, গাই, নাচি, আঁকি।

সমস্তসকল নিত্যকর্ম সামাল দিয়া দিনপ্রত্যেক টিএসসি যাই আমি,
গত সপ্তাহ তো প্রতিদিনই গেলাম
ওর জন্য, ওর অস্তিত্বে মিশ্রিত হইতে
ওর হাতে খামচাইতে, কামড়াইতে
ওর লগে চারুকলা, রমনায় পট করতে।
আমি নিজপাঠ ফাঁকি দিয়াও টিএসসি আইসা বইসা ছিলাম,
শুধু ওর জন্য, ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাইখা ধোঁয়া উড়াইতে
ওর কোলে মাথা রাইখা ঘুমাইতে।

বিশ্বাস করো চতুর্দশী আমি আর অষ্টাদশী আমার মাঝে কোনো তফাৎ নাই,
বদলায় নাই আমার হৃৎপিণ্ডখানা,
ঠিক আমাগো সংসদের মতোই অপরিবর্তনীয় এক অবিনশ্বর অবস্থায় আছে।
বছর চারেক আগে তোমারে যেমন ভালোবাসতাম, এখন ওরেও তেমন বাসি,
স্মৃতি আওড়াইয়া দ্যাখো কত ভীষণ গুমোট নির্ঘুম একলা রাত কাটাইতাম আমি।
তোমার কোলহীনতা, স্পর্শহীনতা ঘুমাইতে দিত না আমারে,
অন্ধকারকে প্রেমিক ভাইবা বিড়ি টানতে টানতে রাত কাটাইতাম।

তুমি তখন অন্য সংগীতে মগ্ন,
অন্য প্রেমিকার চুম্বনে আসক্ত,
অন্য নারীর যোনিতে নিমগ্ন।
শতরাত আমার ফোনকলের উত্তর আসে নাই,
অবিশ্রান্ত কষ্ট পাইতাম আমি।
বৃষ্টিসন্ধ্যায়, শীতরাত্রে ভয়ংকর হৃদব্যথায় হৃৎপিণ্ড পুইড়া যাইত
আমি এসব তোমারে বলি নাই,
তুমি জানতেই তো।

আজ বসন্তবৃষ্টিতে নব্যপ্রেমিককে নিজ ফ্লাটে আইনা আদর আবদার করছি,
বহুক্ষণ তারে ভালোবাসছি।
আজ আর সম্ভবত না, আমি তারে ভালোই বাসি
আদতেই বাসি।
বহুত বাসি।

সে আমার ভালোবাসাহীনতা, প্রেমহীনতা
পূর্ণায়ে সম্পূর্ণ কইরা তোলে আমারে।
যা তুমি পারো নাই,
সে তা সমস্ত পারে।
যে সমস্তে তুমি ব্যর্থ ছিলা,
সে সমস্তে সে বড্ড পারদর্শী।

উহু! বলে দিও তোমার প্রেমিকাকে
আমার নীলগ্রহে এখন অন্য কেউ, তুমি না।
বলে দিও তোমার প্রেমিকাকে
এখন আমি আর অন্যের প্রেমিককে ভালোবাসি না,
নিজপ্রেমিককেই বাসি।

প্রেম বৃত্তান্ত

আমার প্রেম হয় না, টিকে না
হবেও না, টিকবেও না।

আমি যে লিলিথ, ইভ না
আমি যে এ্যাথেনা, আফ্রোদিতি না
আমি যে দূর্গা, রাধা না।

ওদের অস্তিত্ব লিলিথ, এ্যাথেনা বা দূর্গার পদযুগলেই পাওয়া যায়।

প্রেয়স, তোমার শরীর

প্রেয়স,
আমি কি তোমার সাথে কখনো রেস্তোরাঁয় বসে পেটপূজা করতে কিংবা
হাসি হাসি রক্তিম লাজুক মুখে কথা বলতে চেয়েছি?

হয়তো ছোট্ট কিশোরী বয়সে চেয়েছিলাম,
এখন একেবারেই এভাবে চাই না তোমাকে, প্রিয়তম।
এত যদি উৎফুল্ল হয় হৃদয় তোমার দর্শনে আমাকে
তবে চলে এসো না কোনো বর্ষার সন্ধ্যায় সিক্ত শরীরে উষ্ণ হৃদয়ে,
কিংবা ঘন কুশায়াচ্ছন্ন শীতের রাতে এসে জাগিয়ে তোলো না আমায়!

তোমার বৃষ্টিভেজা নগ্ন শরীর,
শীতের কুয়াশাবৃত শীতল তোমাকে,
জড়িয়ে চুমুতে চুমুতে ঘর্ষণে ঘর্ষণে উষ্ণতায় জ্বলে উঠতেই ভালোবাসি আমি।
ভালোবাসি তোমার নরম, ফাঁপা, রসালো
অভিজ্ঞতাপটিয়সী শত তরুণীকে চুমু খাওয়া বাদামি ওষ্ঠদ্বয়।
ভালোবাসি তোমার শরীরের সমস্ত শীরা, ধমনি, হাড্ডি, মাংস, লালা, বীর্যকে।
ভালোবাসি তোমার রক্তিম অবিনাশী সংকর শরীরটাকে,
সত্যিই ভালোবাসি।
খুব!

প্রেয়স,
জানো কি?
ক্ষণিকের জন্যও আমার হৃদয় বলে না, মন খারাপের কোনো এক
পড়ন্ত লালচে বিকেলে তোমাকে নিয়ে লেকপাশে বসে কাঁধে হাত
কিংবা কোলে মাথা রেখে বাদাম খেতে।
আহা! তুমি তো বারংবার ব্যর্থ ছিলে আমার হৃৎপিণ্ডকে উল্লসিত, উত্তেজিত করতে, ভালোবাসতে।
তোমার কামনীয়, পূজনীয় ছিল আমার সদ্য কৌশোরে আলোকিত চামেলি শরীর।

এতদিন পর এ বেলায় এসে আর খুনসুটিওয়ালা চাওয়া পাওয়াগুলো নেই আমার।
আজ আমি ত্রয়োদশী ছোট্ট কিশোরী না,
আমি আজ কৌশোরের শেষ প্রান্তে পা দেওয়া উঠতি যুবতী,
এখন আর আমার শরীর, মন চায় না ভালোবাসামিশ্রিত জনচক্ষু লুক্কায়িত
প্রগাঢ় আবেগমিশ্রিত প্রেমিকের চুমু।

অষ্টাদশী আমি,
আমার হৃদয়, শরীর এখন চায় শুধু তোমার উষ্ণ, চঞ্চল শরীর। শরীর। শরীর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর