ব্রাসেলসের মরোক্কান পল্লী

, শিল্প-সাহিত্য

মঈনুস সুলতান | 2023-08-26 16:04:00

ব্রাসেলসের টাউন হলের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে গ্র্যান্ড প্লেসের ফ্লোরাল কার্পেট ঘিরে ঘুরপাক করনেওয়ালা পর্যটকদের উল্লাস দেখতে বেশ ভালোই লাগে। টাউন হলে আমি এসেছি আমার জানপহচান সুহৃদ লুকাস ও তার গার্লফ্রেন্ড এঞ্জেলিকের সাথে। আজ ভোরবিহানে ব্রাসেলসে আমি বেড়াতে এসেছি ইবোলা উপদ্রুত সিয়েরা লেওন থেকে। মাস সাতেক আগে লুকাস ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসাবে সিয়েরা লেওনে আসে জনমানুষের জিন্দেগিতে ইবোলার কারণে সৃষ্ট দুঃখকষ্টের খতিয়ান সংগ্রহ করতে। তখন আমার সাথে তার দোস্তির সূত্রপাত। তার মারফতে এঞ্জেলিকের সাথে আমার বার কয়েক স্কাইপে কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু মেয়েটির সাথে সাক্ষাত দেখা হলো কেবলমাত্র আজ। আমি প্যারিস যাওয়ার পথে একরাত্রির জন্য ব্রাসেলসে থেমেছি। এঞ্জেলিক আমাকে তার এপার্টমেন্টে সোফাবেডে শুয়ে রাত কাটানোর আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

একটু আগে আমরা টাউন হলের সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসেছি দিন শেষ হয়ে আসলেও গ্র্যান্ড প্লেসের সর্বত্র মোলায়েম আলো খেলছে। এখানকার চত্তর জুড়ে হাজারবিজার তরতাঁজা ফুল দিয়ে একটু আগে তৈরি হয়েছে একটি ফ্লোরাল কার্পেট। তাতে ভলানটিয়ার হিসাবে কাজ করেছে এঞ্জেলিক। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে লুকাসের সাথে তার সম্পর্কে ধরেছে বেহদ চিড়। সিয়েরা লেওন থেকে ফিরে এসে লুকাস হিন্দুস্থানী এক গুরুদেবের কাছে সেলিবাসি বা সেক্স পরিহারের দীক্ষা নিয়েছে। সে হামেশা সকাল-সন্ধ্যা হরেক কিসিমের মেডিটেশন করে বেড়াচ্ছে। বিষয়টা এঞ্জেলিক একসেপ্ট করছে না। তাতে আমাদের সমবেথ মিথস্ক্রিয়ায় ছড়াচ্ছে টেনশন। লুকাসের আচরণে আমিও তাজ্জব হচ্ছি। ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতার উপার্জনে তার চলছে না। সুতরাং সে নাইটগার্ডের পার্টটাইম চাকরি নিয়েছে। এবং তাতে হাজিরা দেওয়ার আগে সে শহরের সেমিটারি বা গোরস্থানে বসে শবাসন করে সময় কাটাচ্ছে। সঙ্গত কারণে তার তাবৎ বিষয়াদি আমার কাছে আজব ঠেকছে।

মলেনবেকের সড়কে হেজাব পরা নারী 

টানা চারঘণ্টা খুব কনসেনট্রেটেড্‌ভাবে ফ্লোরাল কার্পেট তৈরিতে মেহনত করে এঞ্জেলিক ক্লান্ত। তার খিদে পেয়েছে। সে ডিনার না করে এপার্টমেন্টে ফিরতে চায় না। যেহেতু তার ডেরাতে রাত কাটাতে যাচ্ছি তাই সৌজন্যবশত আমি লুকাস ও তাকে ডিনারে নিয়ে যেতে চাই। মরোক্কান রেস্টুরেন্টের প্রস্তাব করলে এঞ্জেলিক প্রাচ্যদেশীয় খাবারের মশলাদার খোশবুর কথা ভেবে এক্সাইটেড হয়। গ্র্যান্ড প্লেসের মিনিট তিরিশেকের হাঁটা দূরত্বে আছে ব্রাসেলসের মরোক্কান পল্লী মলেনবেক। ওদিকে যাওয়ার ডিরেকশন মৌখিকভাবে দিয়ে লুকাস কেটে পড়তে চাইলে—এঞ্জেলিক অনুনাসিক স্বরে আবদার করে, ‘কাম-অন ম্যান, বেচারা সুলতান কতদূর সিয়েরা লেওন থেকে এসেছে, লেটস্ হ্যাভ অ্যা মিল টুগেদার।’ লুকাস মিনিমিনিয়ে কী যেন একটা অজুহাত দিতে গেলে আমিও তাকে অনুরোধ করি, ‘ইউ রোউট এন ইনফরমেটিভ আর্টিকেল এবাউট মরোক্কানস্ লিভিং ইন মলেনবেক। মূলত তোমার প্রবন্ধ পড়ে আমি ব্রাসেলসে মরোক্কান পল্লীটি দেখতে আগ্রহী হয়েছি লুকাস। সো প্লিজ টেইক আস টু মলেনবেক।’ অনিচ্ছায় পথ দেখিয়ে আমাদের সামনে খুব নিরাসক্তভাবে হাঁটে লুকাস। এঞ্জেলিক আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘সিয়ারা লেওন থেকে ফিরে আসার পর থেকে সে এ রকমের মুডি আচরণ করতে শুরু করেছে।’ আমি কোনো জবাব না দিয়ে চোখের ইশারায় এঞ্জেলিককে বলতে চাই—লুকাসের উপস্থিতিতে আমি তার সাথে এ ধরনের সেনসেটিভ কথাবার্তায় এনগেইজড্ হতে চাই না। সে ঠোঁট বেঁকিয়ে অবজ্ঞা করার ফেমিনিন ভঙ্গি করে।

গ্র্যান্ড প্লেস ছাড়িয়ে একটি ব্লক অতিক্রম করতেই দেখি মধ্যবৃত্তদের এক সাদামাটা আবাসিক এলাকার পার্কিং লট জুড়ে বাজছে মস্ত মস্ত সাউন্ড বক্সে স্টিরিও। মন চনমন করা সুরেতালে নাগরিকরা মেতেছে নৃত্যে। অবস্থা দেখে মনে হয়, সারা ব্রাসেলস্ আজ মেতেছে ফ্লোরাল কার্পেট নির্মাণের আনন্দে। জোড়ায় জোড়ায় যুগলরা স্টেপ ফেলে ছন্দিত দেহে নিমজ্জিত হয়েছে সোয়িং ড্যান্সের রিদমিক আবহে। এঞ্জেলিক দাঁড়িয়ে পড়ে কোমরের ঊর্মি ছড়িয়ে নীরবে জানতে চায়—যুগল ডান্সে কারো আগ্রহ আছে কি না? ‘আই ডোন্ট রিয়েলি হ্যাভ মাচ্ টাইম, ডিনার সেরেই... আই রিয়েলি হ্যাভ টু রান,’ বলে এঞ্জেলিকের দেহমনে জ্বলে ওঠা নৃত্যপ্রবণ শিখাতে পানি ঢেলে দেয় লুকাস। তার নিরাসক্ত আচরণে স্যাফয়ার পাথরে আলো পড়ার মতো এঞ্জেলিকের নীল চোখ থেকে ঠিকরে বেরোয় ক্রোধ ও হতাশা মেশানো দ্যুতি।

নাগরিকরা মেতেছে নৃত্যে

লুকাস আগ বাড়তে বাড়তে বলে, ‘আমরা এবার মরোক্কান পল্লী মলেনবেকে ঢুকতে যাচ্ছি। ব্রাসেলসে লক্ষাধিক মরোক্কানদের বাস। টু বি স্পেসিফিক, ২০০৭ সালে নেওয়া আদমশুমারীতে নাম ওঠে দুই লাখ চৌষট্টি হাজার মরোক্কান বংশোদ্ভূত মানুষের। এদের অনেকেই জন্ম হয়েছে বেলজিয়ামে।’ আমরা চলে আসি মলেনবেকের একটি সড়কে। রাস্তায় প্রচুর হেজাব পরা নারী দেখে এঞ্জেলিক মন্তব্য করে, ‘সিমস্ লাইক উই আর ওয়াকিং থ্রু অ্যা স্ট্রিট অব মিডিলইস্ট।’ আমারও মনে হতে থাকে আমরা যেন চলে এসেছি মুসলিম প্রধান কোনো দেশে। হাঁটতে হাঁটতে শুনি পথচারীদের আইফোনে বাজছে মাগরিবের আজানের ধ্বনি। আমাদের ঠিক সামনে সড়ক অতিক্রম করছে একটি মরোক্কান পরিবার। দাড়িওয়ালা পুরুষ ঠেলছে খালি স্ট্রলার। পিছনে শিশুর হাত ধরে হাঁটছে খয়েরি রঙের বোর্কা পরা নারী।

স্ট্রিটের দুপাশে পর পর কয়েকটি মরোক্কান রেস্তোরাঁ। আমাদের কেউ একজন যেন দাঁতের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছি, আর লুকাস অনুগ্রহ করে অনিচ্ছায় আমাদের নিয়ে এসেছে ডেন্টিস্টের চেম্বারে, এ রকম ভঙ্গিতে সে আমাদের নিয়ে ঢুকে পড়ে একটি রেস্তোরাঁয়। ক্যানোপির চঁদোয়া তলে সাজিয়ে রাখা অনেকগুলো বেতের সোফা। কাবাবের সুরভি নাকে লাগতেই বাতাসে এরোমা শুঁকে এঞ্জেলিক বলে, ‘লেটস্ হ্যাভ গুড টাইম উইথ ওরিয়েন্টাল ফুড।’ দেখি বেতের সোফায় খুব রিলাক্সড্ কায়দায় বসে এক মরোক্কান প্রৌঢ় কাপোল শিশা হুঁকায় ধূমপান করছেন। স্যুট পরা আরব বংশোদ্ভূত সুদর্শন পুরুষের চুল পেকে সম্পূর্ণ রুপালি। তার সঙ্গী সম্ভবত কঙ্গোলীজ কোনো গোত্রের এক কৃষ্ণাঙ্গী মহিলা। আমাদের দেখতে পেয়ে তারা দুজনে মাথা মৃদু ঝুঁকিয়ে বাও করেন। রেস্তোরাঁর ভেতর সম্পূর্ণ নির্জন। এঞ্জেলিক খুব উৎসাহ নিয়ে ম্যানুতে খাবারের ছবি দেখে। স্টার্টার হিসাবে চট জলদি পরিবেশন করা হয় সাত ধরনের সিদ্ধ করা সব্জিতে তৈরি স্যালাদের সাথে গরম গরম রুটি। বেশ তারিয়ে তারিয়ে আমরা স্টার্টার চাখি। মেইন কোর্স হিসাবে এঞ্জেলিক ফিস চারমৌলা বলে গ্রিল করা মাছের সাথে কুসকুসের অর্ডার করে। আমি সবুজ অলিভের সাথে চাকতি করে কাটা লেবু মেশানো তাজিন পদ্ধতিতে রান্না করা চিকেনের কথা ভাবি। এঞ্জেলিক ফিসফিসিয়ে বলে—মেইন কোর্সের পর আমি কিন্তু হেভি একটা ডেজার্ট নিচ্ছি। আমার চাই সিনেমন মেশানো তিন তিনটি বাকলোবা। তার চোখেমুখে খেলছে এক ধরনের চটুল অভিব্যক্তি। আন্দাজ করি—ফ্লোরাল কার্পেট বুনটের জটিল কাজ সুন্দর মতো সমাপ্ত হওয়ায় সে সেলিব্রেশনের মুডে আছে। আমি বিষয়টা টুঁইয়ে দেয়ার জন্য, ‘হাউ এবাউট অ্যা এরোমেটিক শিশা আফটার দ্যা মিল?’ বললে সে উচ্ছ্বসিত হয়ে আমার কব্জি চেপে ধরে বলে, ‘লেটস্ গো ফর আ ওয়ার্ম স্মোক।’ আমাদের হাল্কা মুডের মিথস্ক্রিয়া বোধ করি লুকাসের পছন্দ হয় না। সে হুমাস ও রুটির ভেজিটারিয়ান কোর্স টেক-আউট হিসাবে প্যাকেট করে দিতে বলে। স্টাইরোফোমের প্যাকেট হাতে আসতেই সে—‘হ্যাভ অ্যা ফেবুলাস ইভিনিং.. .. ইউ টু,’ বলে কবরখানায় শবাসনের ক্রিয়াকলাপে যাতে দেরি না হয় এ অজুহাত দিয়ে উঠে পড়ে। লুকাস চৌকাঠ অতিক্রম করে রেস্তোরাঁর বাইরে যেতেই এঞ্জেলিক বিষণ্ণ চোখে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘লেট হিম স্ক্রু হিমসেল্ফ ইন দ্যা গ্রেভইয়ার্ড, আমি চাই না তার মুডের জন্য আমাদের সন্ধ্যাটা রুয়িন্ড হোক।’ আমি তার চোখের ভাষা পড়ে নিয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হাত মুঠো করে ধরে একটু পর তা আলতো করে ঠোঁটে ছোঁয়াই। সাথে সাথে এঞ্জেলিকের গণ্ডদেশ ভরে ওঠে গোধূলির রক্তিমাভায়।

শিশা হুঁকায় ধূমপান

নিরিবিলিতে আমরা খাবারের স্বাদ চাখি। গ্রিল করা ফিস চারমৌলা খেতে খেতে মাঝে মাঝে চোখের ঘন পাপড়ি তুলে আমার দিকে তাকাচ্ছে এঞ্জেলিক। মনে হয় তার মনে জমছে কিছু কথা কিংবা কৌতূহল, কিন্তু কিভাবে বিষয়টা পাড়বে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অলিভ মেশানো চিকেনের স্বাদ চমৎকার, তা তারিয়ে খেতে খেতে অনুভব করি শরীরে হঠাৎ করে জ্বর আসার মতো তার চমৎকার দেহবল্লরীর প্রতি আমার মধ্যে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের আকর্ষণ। লুকাস আমার খুব কাছের লোক, ইবোলাক্রান্ত সিয়েরা লেওনের কঠিন দিনগুলোতে তার সাথে আন্তরিকভাবে মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয়েছি, তার সাথে এঞ্জেলিকের সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যাওয়ার আগে তার গার্লফ্রেন্ডের শরীর নিয়ে ভাবা আপত্তিকর মনে হয়। তাই, মেয়েটির কাঁধের নিচে ভি শেইপের নিরাবরণ ত্বকে ছড়াচ্ছে লাবণ্যের যে জোছনা—তা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আমি বাকলভা ও মিন্ট টি’র অর্ডার করি। খানিক পর পরিবেশিত হয় শিশা হুঁকা। তার চিলিম থেকে ছড়াচ্ছে এপ্রিকটের ফ্লেভার মেশানো তামাকের সৌরভ। চায়ে চুমুক দিয়ে শিশায় দম দিতে গেলে দেখি—কেন জানি অবাক হয়ে এঞ্জেলিক আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আর ঠিক তখনই রোস্তোরাঁর জানালা জুড়ে বেজে ওঠে নানা ধরনের বাদ্য-বাজনা। খোলা শার্সি দিয়ে দেখি—ওখানে এসে দাঁড়িয়েছে জরির জবরজং পোশাক ও লাল রঙের ট্যাসেল ঝোলানো টুপি মাথায় স্ট্রিট সিংগারদের ছোট্ট একটি দল। তার খুব জোশে বাজায়—‘ওয়া লাললা ফাতেমা/ জার রাব্বি গির কালিমা..।’ এঞ্জেলিক আমার হাত থেকে হুঁকার নল সরিয়ে নিয়ে জানতে চায়, ‘টেল মি দ্যা মিনিং অব দিস সঙ।’ জবাবে আমি বলি, ‘আই ডোন্ট রিয়েলি নো, রেস্তোরাঁর ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করো।’ সে এবার আমার চিবুক ছুঁয়ে আবদার করে, ‘আই নো ইউ আর অ্যা মুসলিম, ইউ মাস্ট নো দ্যা মিনিং, আমাকে গানের অর্থটা বলবে না।’ আমি তার হাত মুঠো করে ধরে উঠে দাঁড়ালে—সেও আমার শরীর সংলগ্ন হয়ে হেঁটে আসে জানালায়। স্ট্রিট সিংগারদের থালায় আমরা দুজনে দরাজ হাতে ইউরোর কিছু কয়েন ছুঁড়ে দেই। খুশি হয়ে কেবলমাত্র আমাদের দুজনের জন্য এক বাদক বাঁশরীতে বিশেষ টিউন বাজায়। তন্ময় হয়ে শুনতে গিয়ে খেয়াল করি—আমার হাত আলতো করে পেঁচিয়ে আছে এঞ্জেলিকের কোমর।

স্ট্রিট সিংগারদের ছোট্ট দল 

সাবওয়ে ধরে আন্ডারগ্রাউন্ডের দুটি স্টেশন পাড়ি দিয়ে আমরা চলে আসি এঞ্জেলিকের এপার্টমেন্টের কাছাকাছি। স্টেশনের পাশেই ফুটপাত থেকে সামান্য দূরে পার্ক করে রাখা তার মিনিয়েচার মডেলের ইলেকট্রিক কার। কায়ক্লেশে কেবলমাত্র দুজনের বসার উপযোগী গাড়িটিকে কিউট দেখায়। আমি ব্যাকপ্যাক কোলে নিয়ে তার পাশে বসলে এঞ্জেলিক স্টিয়ারিং হুইলে হাত রেখে বিমর্ষ ভঙ্গিতে জানতে চায়, ‘ক্যান আই আস্ক ইউ ওয়ান স্ট্রেইট কোয়েশ্চন?’ আমি মাথা হেলিয়ে সম্মতি দিয়ে বলি, ‘প্লিজ গো এহেড।’ ব্লক হয়ে যাওয়া ওয়াটার টেপে হঠাৎ করে তোড়ে জল এসে যাওয়ার মতো আবেগ নিয়ে সে জানতে চায়, ‘হোয়াট হেপেনড্ টু লুকাস? সিয়েরা লেওনে সে কী করে সময় কাটিয়েছে? ডু ইউ নো হোয়াই হি লস্ট ইন্টারেস্ট ইন মি?’ আমি সরাসরি এ প্রশ্নের জবাব না দিলে সে মন্তব্য করে, ‘ইউ নো দ্যা হৌল থিং, বাট ইউ আর নট টেলিং মি দ্যা ট্রুথ। নিশ্চয়ই সে কারো সাথে জড়িয়েছে।’ কথা না বলে আমি নিশ্চুপ থাকলে সে আমার হাত মুঠো করে চেপে ধরে। তার করতল ছড়াচ্ছে শরীরে জ্বর আসার মতো উত্তাপ। সে আমার চোখে চোখ রেখে জানতে চায়, ‘বা’ গাল ও গলার এক পাশ পুড়ে যাওয়া ব্লন্ড চুলের নারীটি কে? টেল মি হু দ্যা হেল ইজ শি?’ বর্ণনা থেকে আমি চিনতে পারি এঞ্জেলিক লরা শেলক্রসের কথা বলছে। আমি জবাব দেই, ‘লরা সিয়েরা লেওনে ইবোলা রিকভারি প্রোগ্রামে কাজ করছে। এর আগে কয়েক বার সে ইরাকে ত্রাণ সরবরাহের কাজে যুক্ত ছিল। রোড-সাইড বোমার বিস্ফোরণে তার শরীরের বা’ দিকের বেশ খানিকটা ঝলসে গেছে।’ তারপর উল্টা জানতে চাই, ‘তুমি লরার কথা জানলে কিভাবে?’ এঞ্জেলিক জবাব দেয়, ‘লুকাসের আইফোনে আমি তার ছবি দেখেছি, নাউ টেল মি হোয়াট ইজ দ্যা স্টোরি উইথ লরা?’ আমি রেসপন্সে বলি, ‘অনেস্ট টু গড আই ডোন্ট নো, তবে লরা তার কটেজে নানা ধরনের মেডিটেশনের আয়োজন করে থাকে। শুনেছি লোকাস তার সাথে মেডিটেশন প্র্যকটিশ করত।’ এঞ্জেলিক এবার প্রশ্ন করে, ‘লরা কি হিপনোটিজমের চর্চা করে?’ আমি জবাব দিই, ‘ইয়েস, শুনেছি সম্মোহনের অনেক কলাকৌশল তার জানা আছে। ইবোলা দূরীকরণের কাজ করতে গিয়ে যারা স্ট্রেসড্ আউট হয়েছে, এদের কাউকে কাউকে লরা আত্মসম্মোহনের প্রসেস্ শিখিয়েছে যাতে তারা স্ট্রেস্ ম্যানেজ করতে পারে।’ এবার হিস্টিরিয়া রোগীর মতো ঝরঝরিয়ে কেঁদে এঞ্জেলিক বলে, ‘নাউ আই নো দ্যা ট্রুথ, দ্যাট বিচ্ লরা লুকাসকে হিপনোটাইজড্ করেছে, সে এখনো সম্মোহনের ঘোরের মাঝে আছে। দিস ইজ এবাউট সিক্স মান্থ, সে আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি... আই অ্যাম শিওর কবরখানায় শবাসনে বসে সে লরার ধ্যান করছে। আই রিয়েলি হেইট হিজ মেডিটেশন এন্ড স্টুপিড সেলিবাসি বিজনেস।’

এঞ্জেলিকের ছোট্টমোট্ট ইলেকট্রিক কার

ব্যাকরোড ধরে গলিগুঁজির ভেতর দিয়ে ভ্রমর গুঞ্জনের মতো ধ্বনি তুলে ছোট্টমোট্ট ইলেকট্রিক কারটি মিনিট বিশেকের মাঝে চলে আসে এঞ্জেলিকের এপার্টমেন্টের কাছে। পার্ক করে গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে সে আফসোস করে মন্তব্য করে, ‘লুকাস আবহাওয়া দূষণের কারণে পেট্রোল চালিত গাড়ি পছন্দ করে না। তাই খুব আগ্রহ নিয়ে বিদ্যুত-চালিত ছোট্ট এ গাড়িটি কিনেছিলাম। ভেবেছিলাম দেশে ফেরা লুকাসকে হোমকামিং হিসাবে সারপ্রাইজ দেবো। সে কিন্তু একদিন পাশে বসেও এ গাড়িটা ট্রাই করেনি। সিয়েরা লেওন থেকে ফিরে এয়ারপোর্টে আমার চুমো ফিরিয়ে না দিয়ে কোল্ড ভয়েসে জানাল যে, সে সেলিবাসির দীক্ষা নিয়েছে। আই গিভ অ্যা ড্যাম টু হিজ স্টুপিড সেলিবাসি।’ তারপর এপার্টমেন্টের দিকে হাঁটতে হাঁটতে আমার দিকে চেয়ে ফিক করে হেসে বলে, ‘আমি তো সেলিবাসির দীক্ষা নেইনি, কয়েক মাস তার জন্য অপেক্ষা করলাম, নাউ টেল মি হোয়াই শুড আই স্টার্ভ?’ আমিও হেসে হাল্কা মুডে জবাব দেই, ‘তোমার অনাহারে থাকার তেমন কোনো কারণ তো আমি দেখতে পাচ্ছি না।’

‘হিয়ার ইউ গো’, বলে এঞ্জেলিক এপার্টমেন্টের তালা খোলে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর