বৃহৎ বঙ্গদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে জন্ম নিয়ে তিনি পরিণত হয়েছিলেন বিরল সাহিত্য ব্যক্তিত্বে। অর্জন করেছিলেন সাহিত্যবিশারদ উপাধি। সমগ্র দেশ ও বাংলা সাহিত্যে তিনি রেখেছেন অমর কীর্তির ছাপ। তিনি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) তার জন্ম দিন।
১৮৭১ সালে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সুচক্রদন্ডি গ্রামে জন্ম গ্রহণকারী আবদুল করিম পেশায় ছিলেন শিক্ষক। তিনি ১৮৯৫ সালে চট্টগ্রামে মিউনিসিপ্যাল স্কুলে শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। এরপর তিনি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের দফতরে কাজ শুরু করেন। তিনি বিভাগীয় স্কুল পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। তিনি ১৯৩৪ সালে অবসর নেন এবং ১৯৫৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পরলোকগমন করেন।
পেশা ও অবসর জীবনে তিনি প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহে নিয়োজিত ছিলেন। সাহিত্যের ঐতিহ্য অন্বেষণকারী এক বিরল ব্যক্তিত্ব আবদুল করিম গ্রাম-বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে ঘুরে হাতে লেখা পুঁথি, গান, কবিতা, পালা সংগ্রহ করেন। তখন ছাপাখানার যুগ ছিল না। ফলে তার সংগ্রহের কারণে বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ রক্ষা পায়।
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সংগৃহীত শত শত পুঁথির মাধ্যমে মধ্যযুগের সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডার উন্মোচিত হয়। বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হওয়া সম্ভব হয়।
কলকাতা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও তার সংগৃহীত তথ্যাবলী বিশ্বের নানা স্থানে রাখা আছে। এতে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য, বিশেষ করে লোকসাহিত্যের রূপ ও চরিত্র স্পষ্ট হয়। বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্যময় ইতিহাসের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন থাকে তার কৃতিত্বপূর্ণ আকর ও তথ্যাদির মাধ্যমে।
সাহিত্যবিশারদের কৃতিত্ব বাংলা সাহিত্যকে ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ করেছে। ঔপনিবেশিক আমলের বিরূপ পরিস্থিতিতে বাংলার প্রান্তিক জনপদ থেকে মূলধারার সাহিত্যে অম্লান অবদান রাখার অসামান্য কৃতিত্ব তিনি দেখিয়েছেন। তিনি তার পরিশ্রমী কাজের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন লাভ করেছেন।