জন্মঋণ স্বাধীনতা

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

রহিমা আখতার কল্পনা | 2023-08-30 17:58:33

এসো তবে আয়নায় রাখি চোখ, স্থিরদৃষ্টি বহুদর্শী চোখ রাখি এই কাচে
চার দশকের পথ পাড়ি দেয়া বয়সী সূর্যের কাছে সাক্ষ্য নেই
এসো তবে তার কথা বলি, তাহাদের কথা বলি—শুনি, স্বাধীনতা!
চল্লিশ বরষী কিছু পুরুষের এই গল্প অথবা চল্লিশ রমণীর গাথা
যারা জানে নাই নিজেদের উত্তরাধিকারসূত্র, পিতা, পূর্বসূরি।
একমাত্র জননী স্বজন, কেউ কেউ জন্মদাত্রীকেও হারিয়েছে, মৃত বা জীবিত,
স্বাধীনতা-মূল্যে পাওয়া তাদের এ জীবন
অথবা জীবনমূল্যে জন্মঋণ এদেশের স্বাধীনতা—
আমি একাত্তরের অস্পৃশ্য যুদ্ধশিশুদের কথা বলি, বলি এক বিবর্ণ আখ্যান।

আমি নিরুপায় নষ্টগর্ভা ধর্ষিতা মায়ের কথা ভুলতে পারি না, স্বাধীনতা!
আমি একাত্তরের তাণ্ডব, বাউকুড়ানির ঝড় মনে রাখি, স্বাধীনতা!
আমি উনুনে ফুটন্ত হাঁড়িভরা টগবগে আউশের ভাত ফেলে পলায়ন মনে রাখি
আমি বাস্তুভিটার আগুন, মৃত্যুর জিহ্বা ছুঁয়ে থাকা স্তব্ধরাত ভুলতে পারি না
আমি ‘মুক্তি’ ইব্রাহিম, আমির হোসেন, মোস্তফার স্মৃতি ধরে হাঁটি পথ,
জলাশয়ে ভেসে ওঠা দুর্গন্ধে অচিন স্বজনের বীভৎস লাশ ভুলতে পারি না।
পাকা আমনের সোনারঙ ক্ষেতে থিকথিকে গাঢ়রক্ত-আলপনা কখনো ভুলি না
আমি ত্রাসে নীল, মৃত্যুময় রঙজ্বলা শৈশবের ভোর ভুলতে পারি না, স্বাধীনতা!

তারা, সেই যুদ্ধ-সন্তানেরা দেখে নাই সেদিনের মৃত্যুমত্ত বিভীষিকা,
চক্রবন্দী যত্নহীন শঙ্কিত মায়ের গর্ভ সুরক্ষা তখনও, তাহাদের—
যেন মায়েদের নরকযাপনে ঐশ্বরিক নিরাপত্তা পেয়েছিল গর্ভের কোরক।
আজ তারা চার দশকের বিষপান শেষে জানে ‘স্বাধীনতা’ শব্দের গভীর গূঢ়কথা
জানে, অমূল্য মানচিত্রের মূল্যে জন্ম নিজেদের
জানে, আজন্ম মৃত্যুর মতো সঙ্গী এই অবমাননার আয়ু—।
তাদের মগজে যুদ্ধস্মৃতি নেই, নিজেরাই তারা একেকটি মুক্তিযুদ্ধ আজ
নিজেরাই তারা জন্মলগ্ন থেকে ক্রমাগত নগ্ন যুদ্ধগাথা
অবিরাম ইতিহাস—
এসো আজ এই রোদ ঝলমলে শুদ্ধ মুক্ত দিনে তাদের কথাও বলি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর