তাসনুভা অরিনের একগুচ্ছ কবিতা

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

তাসনুভা অরিন | 2023-09-01 00:22:29

ইলেক্ট্রা সংবাদ

পিতৃভক্ত কন্যারা অবচেতনে মাতৃঘাতিনী
অথবা পুত্রমুগ্ধ মাতারা স্তন থেকে সরিয়ে রাখে কন্যা ঠোঁটের স্মৃতি
আর সেদিনও পুষে রাখা পুত্র আঙ্গুল, ছোট ছোট নকশার বুননে, পশমি বুক খুলে খুলে দেখে খোকন শৈশব।

ইলেক্ট্রার পক্ষপাত ছিল বাবার প্রতি
ইলেক্ট্রার মা’র ছিল তীব্র ঘৃণা ইলেক্ট্রার বাবার প্রতি
ষড়রিপু, ষড়যন্ত্র, সংসার
রাষ্ট্রীয় তহবিলে জমা হচ্ছিল ত্রিভুজ খুনের গল্প

আমি মা’র চোখ থেকে সরিয়ে চোখ একবার বাবার চোখ
বাবার চোখ তখন মা’র কক্ষপথ ঘুরে অন্য কক্ষপথ
মা’র চোখ তখন বাবা’র কক্ষপথ ঘুরে অন্য কক্ষপথ।

আমি তখন জাতিস্মর
স্পার্ম জন্মে প্রচণ্ড প্রবাহে ঢুকে যাচ্ছি জঠরে
আমি কি তখন গোপন সাপ, কিছুটা মাতৃঘাতিনী
বাকিটা জন্ম, রাখতে গোপন মা’র বিদগ্ধ প্রেমিক।

বাবার ঘরে নতুন মুখ, ইলেক্ট্রা সংবাদ

নীল সহবাসের ঘোড়া

খুন আর খুনের অধিকারী সকল দেহ ছিল অবতার
প্রবাদ অষ্টমী
সেও হারিয়ে গেল, জাতিস্মর।

স্মরণকালে মরণ ব্যথা জাগে না
জাগে কথা
জাগে বুদবুদ

বায়ু কান্না

ফুরিয়ে যাবার মতন কিছু মায়া
লুপ্ত হাওয়া
আপদ ব্যাঞ্জনা

মিথুন বিলাশে তুলাযন্ত্র ছিল রাজযোটক আটচালা, সব্যসাচী সংসার
সাপ আর সাপিনীর হস্ত মৈথুন মুদ্রা।

ওদিকে বায়ু পরাগী
পরাগায়ণের হলুদ ভ্রমর
রমণের আকাশ ফুরিয়ে এলে
কেমন মিহি করে নিলো ডানা

ল্যান্ডিং প্রসেজ

খামখা কান্না তুলে লাভ কী
থমকে থাকল ফুলের তোড়া
হয়তো ওটুকুই

যাবৎজীবন কারাবাসে থাকবে কেন স্মৃতি?
ওই যে ছুটছে নীল সহবাসের ঘোড়া।

পদ্ম নাভি ও কস্তুরী বিদ্যা

ঘুঙ্গুরের নিচে যখন থমকে ছিল অবরোহী নাচমহল
উত্তাল পায়রার ঈ-কার আসমান
পদ্ম নাভিতে ছিল কস্তুরী বিদ্যা
নিপাতনে সিদ্ধ স্বর-কলা
সুরাসুরে যুদ্ধ হলো
কে পাবে ত্রিভুবন মোহন মোহিনী?

অমরাবতীর পালঙ্কে তখন ঘুমন্ত রাজকন্যা
চোখ খোলে না
পায়ে রিন রিন মুদ্রা, নাচ খোলে না
দূর থেকে যদি আসে দুপুরের নীল ঘোড়াটা
চোখদুটো বরফের হিম দানা
খুলবে কি পদ্ম তার অস্পষ্ট কলা

আরোহণ
অবরোহণ

ত্রি তা ল
ও উ ম

কোথাও সে চোখ জেগেছিল চোখের মহুয়ায়
ম ম মায়া।

অন্ধ হোমারের বিষাদ যাপন

সেই বৃষ্টিতে হোমার এসেছিল
এক হাতে অন্ধ চোখ আর অন্য হাতে অমরত্ব বেচতে
মানুষগুলো একে একে অমরত্ব কিনে নিলো
সেদিন থেকে এখানে আর কারো মৃত্যু হয় না

মানুষ তখন সুইসাইড ট্যাবলেট আবিষ্কারে ব্যস্ত হয়ে গেল
জন্ম হয়ে উঠল অভিশাপ, আর সঙ্গম পাপ
কেউ কাউকে ভালোবাসতো না, হত্যার জন্য মুখিয়ে থাকত

সবাই সবাইকে হত্যা করতে চাইত কারণ হত্যাই ছিল ওদের একমাত্র দাওয়াই।
কিন্তু অমরত্বের অভিশাপে ওরা মরত না কেবল জর্জরিত হতো
ওরা খুব খুশি হতো—যত আঘাত তত আনন্দ
ওদের প্রিয় সঙ্গীত ছিল দেবী এলগিয়ার কান্না

একদিন টি থে না স আবিষ্কারের পর ওরা একসাথে ঝিঁঝিঁ হয়ে গেল
বাজ জ্জজ্জজ্জজ্জজ্জজ্জজ্জজ্জ য য য য

দূর কোন গ্রহে বসে বসে হোমার শুনছে পৃথিবী একটা মৌচাক কিন্তু তার কোনো মৌয়াল নেই
ওখানে সবই ছিল শুধু হোমারের অন্ধকার নেবার কেউ ছিল না।

আপেল বিষাদ ও পরচর্চা

বিষণ্ণ ফলের তালিকায় আমি আপেলকে দেখি
ভিতরে সে এক কামড়েই কেমন রক্তিম হয়ে যায়
তারপর বিষণ্ণ

গোপন প্রেমিক প্যারিসের হাত ছুঁয়ে কত হাত, ঠোঁট আর দাঁত চিনে চিনে এই বিষাদ আর পরচর্চার কাছে ফিরে এলে
তুমি ততটা বিষাদ নও
কিছুটা বিদেশি
আমার জিভের সাথে দূরত্ব মেপে চলো

বিচ্ছেদে ভয়?

প্রেম অনেকটা ভগবত লীলা
রুক্মিণী, রাধার হয়ে কৃষ্ণে উপগত
প্রেম অনেকটা আকাশ কুসুম
গভীর আহ্লাদে জড়িয়ে শপথনামা
ভুল উচ্চারণী আর দণ্ড স্বীকার।

এই পরচর্চা বাগানে আপেল চর্চার অভিসারে তোমাকে নতুন করে রোপণ করি

তারপর দ্রৌপদীর উপলক্ষে আরেকটি বিষ্ণুবতার
গল্পে গল্পে রাত

তথাপি বিষাদ
তথাপি বিস্বাদ
যুদ্ধ অবিকল
প্রেম....পরিহাস
আপেল বাগানে কলির নমস্কার।

আর হ্যালির ধূমকেতুদের ঠিক আমারই বুকে পতনের তত্ত্ব ফাঁস
বিজ্ঞানী তোমার তাড়িত চুম্বকীয় বল নয়
গাম আবিষ্কারের পর থেকে সম্পর্কগুলো খসে যেতে শুরু করল
এখন স্যাটেলাইট জুড়ে সুপার গ্লুয়ের বিজ্ঞাপন।

এখানে সম্ভাবনা নেই, সদ্ভাব আছে

ভিতরে মৃত্যু পোষা মানুষগুলো ঠিক কতক্ষণ হাসে
মুখোমুখি হয়েও মুখ ঘুরিয়ে নেয় সহজে
আড়ালে গুটিয়ে রাখে বিষাদ ডানা চোখ
শুনেছি মৃত্যুর কাছে বন্দক থাকে দেহ
একে একে খুলে দিয়ে হাত পা চোখ মজ্জা...
নির্ভার
যেন কোনোদিন তারা জন্মেছিল না
মনে নাই জন্মদানীর মোম, মোম গলা সন্ধ্যায় প্রবল চুমু
এই ছায়া অপরিহার্যতার দিনে রোদ ঘুরে ঘুরে আমরা এদিন মুখর
ডালপালা ছড়িয়ে
এখানে সম্ভাবনা নেই, সদ্ভাব আছে

আদিম ঘরের প্রথম সন্ধ্যাকাল

প্রেম ফিরে যাচ্ছে আদিম ঘরে
প্লাটিনাম অথবা নিকেল রোদের মতন কড়া সবুজ দিনে
আগুন উৎসব চোখ ও চোখমালা পার্বণে

হাত ছেড়ে হাত ধরে
তোমার জন্মের গন্ধে তোমার মৃত্যুর গন্ধে একাকার শৈশবে

না মাটি চিবুক ছুঁয়ে আস্কারা দিতে দিতে চলছিল প্রভাতকলি
লজ্জা ফোঁটা তারা
বোধহীন, অপরাধহীন
প্রেম আর প্রেমহীনতায়

সব সত্যি সত্যি ছিল
সব রূপকথা ছিল, আকাশ ছুঁয়ে থাকা হারকিউলিস, কালপুরুষ
ফুল ছিল, নাম ছিল না এমন—এমন করে ভালোবাসা, মিলনের পর দূরে যাবার নেশা, অন্ধ অন্ধ বৃত্ত যাপন

কথা ছিল না, শব্দ ছিল
শব্দ ছিল না, শীৎকার ছিল

৩৬৫ ধাপে কাউকে চিনে নেবার আস্কারা—তাও ছিল
ব্রহ্মা ব্রহ্মা করে কাঁপছিল যখন ৩৬৫’র গাভিন পৃষ্ঠা
রাত ছুঁই ছুঁই
অন্ধ আদিম ছিল মর্মর
কে তোমাকে বলে গেল ‘অন্ধ আদিম, তোমার শরীর শরীরের যোগ্য না, যজ্ঞে চড়িয়ে তাকে শুদ্ধ করো’

তোমার পাপ বোধ না জন্মানোর আগে ওখানে কোন পাপ ছিল না
পায়ে পায়ে নিয়ে এলে তারপর জরা তারপর অর্ধনমিত প্রেম
চোখের থেকে চোখ সরিয়ে নেবার গল্পটা সেদিন শুরু হয়েছিল।

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

এ সম্পর্কিত আরও খবর