রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
সোমবার (২৬ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন সিনেট ভবনের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রগতিশীল ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ’র ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রশাসনের (অধ্যাপক মিজানউদ্দিন ও তার নেতৃত্বাধীন) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণে ৮০ লাখ টাকা তছরুফ করেছেন। তদন্ত করে এর প্রমাণও মিলেছে। একই সাথে তারা প্রথমে প্রণয়ন করা নকশা বদল করে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি নিচে যুক্ত করেছেন। যার মধ্য দিয়ে স্পষ্টভাবে জাতির পিতাকে অবমাননা করা হয়েছে। স্মৃতিফলক নির্মাণ ও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননায় জড়িতদের অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে স্থায়ী বরখাস্তের দাবি জানান তারা।
এসময় তারা আরও বলেন, বিগত প্রশাসনের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করায় কতিপয় শিক্ষক বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দফতরে দফতরে ঘুরে অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। বর্তমান উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম গতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে প্রশাসনের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার ঘোষণা দেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.ফিল-এর ফেলো মতিউর রহমান মর্তুজার সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের সাবেক প্রশাসক ও ইতিহাস বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন মিশ্র, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এসএম আবু বকর, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক ও সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক রবিউল ইসলাম, সহকারী প্রক্টর ও চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক হুমায়ন কবীর, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাওন উদ্দিন, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীম হোসেন, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এ এন এম ফয়সাল আহমেদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস আলী, প্রজন্ম লীগের রাবি শাখার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজ আল আমিন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে রাবিতে শহীদ তিন শিক্ষকের স্মরণে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি নির্মাণে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়। যার প্রধান ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম। ফলকটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকেই কমিটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। একইসঙ্গে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নামে তৈরি হলেও এতে মূল নকশা এড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুকে অবমাননাসহ এটি নিয়ে আরও বিতর্ক শুরু হয়।
এর প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭৩তম সিন্ডিকেট সভায় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের প্রশাসন। তদন্ত শেষে অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ার তথ্যযুক্ত করে প্রতিবেদন দেয় তদন্ত কমিটি।