শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণে দুর্নীতি, জড়িতদের শাস্তি দাবি

, ক্যাম্পাস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-30 07:59:24

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের নকশা বদল করে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা ও নির্মাণকাজে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত শিক্ষকদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে ‘ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্যমঞ্চ’র ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

কর্মসূচি থেকে জড়িত শিক্ষকদের 'দুর্নীতিবাজ' আখ্যা দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের রিলিফ ভাস্কর্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ছিলো না। মূল কাজে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। ভাস্কর্যে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বাঁ পাশে এবং নিচে বঙ্গবন্ধুর রিলিফ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যম জাতির পিতাকে অবমাননা করা হয়েছে। যেটি কোনো প্রগতিমনা শিক্ষকদের কাজ হতে পারে না।

তারা আরও বলেন, স্মৃতিফলকটি নির্মাণে ১৪০০ কেজি তামা ব্যবহার করার কথা ছিল। যার মূল্য ধরা হয়েছিল ১৪ লাখ টাকা। অথচ সেখানে মাত্র ৪৯২ কেজি তামা ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও স্মৃতিফলকে টেম্পার্ড গ্লাস ব্যবহার করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

রাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এ.এন.এম ফয়সাল আহমেদের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তৃতা করেন হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রবিউল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. গোলাম সারওয়ার, চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির, ফলিত গণিত বিভাগের প্রভাষক শিক্ষক আসাদুজ্জামান,  রাবি শাখা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাবেক সভাপতি ও এম.ফিল ফেলো মতিউর মর্তুজা, রাবি শাখা বঙ্গবন্ধু প্রজন্মলীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমূখ।

রাবিতে দুর্নীতিতে জড়িতদের শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন। ছবি: বার্তা২৪.কম

এতে সভাপতিত্ব করেন ব্যাবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. শামীম হোসেন। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে তৎকালীন প্রশাসনের মেয়াদকালে রাবিতে শহীদ তিন শিক্ষকের স্মরণে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় । এটি নির্মাণে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়। ফলকটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকেই কমিটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। একইসঙ্গে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নামে তৈরি হলেও এতে মূল নকশা এড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়।

এর প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭৩তম সিন্ডিকেট সভায় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেমকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। তদন্ত শেষে অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ার তথ্যযুক্ত করে প্রতিবেদন দেয় তদন্ত কমিটি।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪০০ কেজি তামা ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহার করা হয়েছে ৪৯২ কেজি। বাকি ৯০৮ কেজি তামার অর্থের খোঁজ মেলেনি। যার আর্থিক মূল্য ৯ লাখ আট হাজার টাকা।একই সঙ্গে স্মৃতিফলকে শৈল্পিক কাজের টেম্পার্ড গ্লাসের জন্য তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও তা ব্যবহারের কোনো তথ্য পায়নি তদন্ত কমিটি। পুরো প্রকল্পের জন্য লেনদেন প্রক্রিয়ায় ‘মারাত্মক অসঙ্গতি’ আছে বলে তদন্ত কমিটি উল্লেখ করেছে। দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর