জয় হলো শিক্ষার, বিজ্ঞানের, গবেষণার। অবলুপ্তির অবগুণ্ঠন ছিন্ন করে ফিরে এলো তিন হাজার বছরের প্রাচীন শহর!
সভ্যতার ইতিহাস বলছে, চাপা পড়লেও কিছুই হারায় না। না স্মৃতি, না সম্পদ। সবই রূপ বদলিয়ে ফিরে ফিরে আসে। এমনটিই মনে করেন ভূবিজ্ঞানীরা। এবার সেটাই সত্য বলে প্রমাণ করলেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। ফিরিয়ে আনলেন তারা মরুভূমির বুকে তিন হাজার বছরের প্রাচীন ও বিলুপ্ত এক শহর।
মাটির নিচে চাপা পড়ে যাওয়া প্রাচীন শহর অনেক আছে পৃথিবীতে। বিভিন্ন সভ্যতায় এমন হারিয়ে যাওয়া শহর অসংখ্য। এশিয়ার সিন্ধু সভ্যতা থেকে লাতিন আমেরিকার মায়া, ইনকা, অ্যাজটেক সভ্যতায় হারিয়ে যাওয়া শহরের ইয়াত্তা নেই। ঠিক যেন ‘সোনার শহর’। এমনটাই বলছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
তবে সব লুপ্ত শহরই 'স্বর্ণ নগরী' এল-ডোরাডোর মতো নয়। তবে এবার তিন হাজার বছর আগে হারিয়ে যাওয়া যে শহরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তা নাকি সেই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো ও সমৃদ্ধ শহর ছিল। মিশরের সর্বসাম্প্রতিক আবিষ্কারকে ঘিরে বিশ্বের সেরা ক্যাম্পাসগুলোর ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে এজন্য উৎসাহ তুঙ্গে। কায়রো শহর থেকে কিছুটা দক্ষিণে বালির নিচে প্রায় অবিকৃত অবস্থাতেই উদ্ধার হয়েছে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ।
ফারাও তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কারের পর মিশরের ইতিহাসচর্চায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হিসাবে ধরা যায় এই শহরটিকে। এমনটাই জানাচ্ছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। কিন্তু কী আছে এই শহরের পিছনে? আসলে তিন হাজার বছর আগে মিশরীয় সভ্যতা তার নিজের জৌলুস একইভাবে বজায় রাখতে পারলেও পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন সভ্যতার জন্ম হয়ে গিয়েছে। মিশরীয়দের সঙ্গে তাদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগও গড়ে উঠেছে একটু একটু করে। এই সময় মিশরের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমাণ করতেই নতুন করে উদ্যোগ শুরু করেছিলেন ফারাওরা। এই সময়েই ফারাও তৃতীয় আমেনহোতেফ এমন এক শহর তৈরি করেছিলেন, যা আকারে এবং জৌলুসে সেই সময়ের সমস্ত শহরকেই হার মানায়। ঐতিহাসিকরা বেশ কিছু নথিতে সেই শহরের কথা জানতে পারলেও তার সন্ধান পাননি এতদিন ধরে। প্রায় ২০০ বছর ধরে অনুসন্ধানের পর অবশেষে সেই শহরের সন্ধান পেলেন ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকগণ।
সুপ্রাচীন নগরী আবিষ্কারের রোমাঞ্চে সমগ্র মিশর জুড়ে প্রত্নতাত্ত্বিকদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল পর্যটন ব্যবস্থা। এবার নতুন করে পর্যটন যেমন শুরু হয়েছে, তেমনই শুরু হয়েছে জাতীয় মিউজিয়াম তৈরির প্রকল্পও। ঠিক সেই সময়েই যেন ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের একটির সাক্ষী থাকল মিশর। তৃতীয় আমেনহোতেফের সময় তৈরি যে শহর টিকে ছিল ফারাও তুতেনখামেনের সময় পর্যন্ত। নতুন এই আবিষ্কার যে মিশরের অনেক অজানা ইতিহাসকে তুলে ধরবে, সে-কথা বলাই বাহুল্য। তদুপরি করোনাকালের স্তব্ধ পরিস্থিতিতেও শিক্ষা, গবেষণার সচলতা আর সাফল্যের ইতিবৃত্ত রূপে চিহ্নিত হয়ে রইলো নীল নদের মরুভূমিতে লুক্কায়িত এই মহত্তম আবিষ্কারের ঘটনাটির মাধমে।