লক্ষ্য যখন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

, ক্যাম্পাস

সিফাতুল্লাহ আমিন | 2023-08-26 18:44:14

সরকারের চলমান ভ্যাকসিন কার্যক্রম ও করোনা পরিস্থিতির ক্রমোন্নতি কথা বিবেচনা করে দ্রুতই শুরু হতে যাচ্ছে থেমে থাকা শিক্ষাবর্ষ ২০২০-২১ এর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। প্রতিবছরের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা জুড়ে আছে দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো।তবে বিগত বছরের মতো এবারো আবেদন করা সকল শিক্ষার্থী সুযোগ পাচ্ছে না পরীক্ষা দেওয়ার।মোট আবেদনকৃত ৮০ হাজার ৯৩৩ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে শুধুমাত্র ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী।তাদের জন্য দিক নির্দেশনা মূলক পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর কিছু শিক্ষার্থী।

প্রস্তুতির ক্ষেত্রে মূল বইয়ের বিকল্প নেই

মাহমুদুল হাসান সৌরভ

প্রথম বর্ষ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনকার সময়ে শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে পড়াশুনা শেষ করে একজন গ্রাজুয়েট গড়তে পারে নিজের উজ্জ্বল এবং সার্থক ভবিষ্যৎ। বর্তমান সময়ে মেডিকেল কলেজ এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে তাল মিলিয়ে দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এগিয়ে যাচ্ছে অনেকদূর। পড়াশুনার পাশাপাশি গবেষণা ও কর্মক্ষেত্রেও অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে আছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা।

প্রস্তুতির ক্ষেত্রে মূলবইয়ের কোনো বিকল্প নেই। উদ্ভিদবিজ্ঞানের জন্য আবুল হাসান স্যারের বই, প্রাণিবিজ্ঞানের জন্য আজমল স্যারের বই, রসায়নের জন্য হাজারী-নাগ স্যারের বই, পদার্থবিজ্ঞানের জন্য ইসহাক স্যারের বই এবং উচ্চতর গণিতের জন্য কেতাব স্যারের বই ফলো করাই উত্তম। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিতের  অধিকাংশই গাণিতিক সমস্যা থাকে। প্রতিটি অধ্যায়ের গাণিতিক সমস্যার উদাহরণ ও বিগত বছরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় আসা গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। ইংরেজির নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। বিগত বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করতে পার। যারা মেডিকেলের প্রিপারেশন নিয়েছিলে তাদের জন্য এক্সট্রা হিসাবে উচ্চতর গণিত আর যারা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রিপারেশন নিয়েছিলে তাদের জন্য এক্সট্রা হিসেবে জীববিজ্ঞান কাভার করতে পারলেই প্রস্তুতি অনেকটাই সম্পন্ন হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। তবে অবশ্যই সর্বশেষ সংস্করণের বই পড়া উচিত কেননা প্রশ্নপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে সর্বশেষ সংস্করণের বইকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। মুলবই শেষ করার পর প্রশ্নব্যাংক সলভ করাটাও অত্যন্ত জরুরী যা একজন শিক্ষার্থীকে প্রশ্নপদ্ধতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে সহায়তা করবে।

কৃষিবিদদের কর্মক্ষেত্র যথেষ্ট উর্বর।

স্নিগ্ধা আজভীন সখী

দ্বিতীয় বর্ষ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

কৃষিই কৃষ্টি। কৃষিই সমৃদ্ধি।  কৃষিকে ঘিরেই মানুষের সভ্যতার জাগরণ শুরু। কৃষিই পৃথিবীর মূল চালিকাশক্তি।  পৃথিবীর বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্যে কৃষি অন্যতম। তাই এই কৃষিকে এগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একাধিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে নিজের ভবিষ্যৎ কি হবে সেটা যাদের ভাবনা তাদের জন্য -

প্রথমেই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিবিদদের দিয়ে গেছেন প্রথম শ্রেনির মর্যাদা। ডাক্তার, ইন্জিনিয়াররা যেমন দেশে চাকরিতে প্রথম শ্রেনির মর্যাদা পান, তেমনি কৃষিতে স্নাতকোত্তর কৃষিবিদরাও প্রথম শ্রেনির মর্যাদাসম্পন্ন হবেন।

ভালো ফলাফলের মাধ্যমে কৃষি ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক হিসেবে যোগদানের সুযোগ,  বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের ( বিসিএস ) পরীক্ষায় টেকনিক্যাল ও জেনারেল উভয় ক্যাডারে আবেদনের সুযোগ পাওয়ায় দেশের সব কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পারবেন। তাছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, গম, ইক্ষু, চা, মসলা, বন, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট,  পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেশম উন্নয়ন বোর্ড, লাইভস্টক কর্পোরেশন, বিএসটিআই এবং মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিতে পারবেন।

আবার, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন এফএও, ইরি, ডিএফআইডি, ইউএসএআইডি, ড্যানিডা, সিডা, উইনরক, আইএফডিসি ও অক্সফাম জিবির মতো প্রতিষ্ঠানেও রয়েছে কৃষিবিদদের বিশেষ অগ্রাধিকার। এভাড়াও সরকারি বেসরকারি ন্যাশনাল অ্যাগ্রোকেয়ার, লালতীর, নীলতীর,এসিআই, আরডিআরএস, ব্র্যাক, স্কয়ার, প্রশিকা, কৃষিবিদ গ্রুপ ও অ্যাকশন এইডের মতো প্রতিনিধিত্ব কারী অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অফুরন্ত সুযোগ।

পরিশেষে এ কথা বলা যায়, কৃষিবিদদের কর্মক্ষেত্র যথেষ্ট উর্বর। রয়েছে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ

মোঃ আসাদুল্লাহ

দ্বিতীয় বর্ষ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের সাধারণত ভর্তি পরীক্ষার আগে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর বিষয়ে তেমন কিছু জানা হয় না। বিভিন্ন ভর্তি সহায়ক কোচিং বা টিচার রা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছুটা ধারণা দিয়ে থাকেন। যেখানে মেডিকেল এ প্রস্তুতি নেয়া শিক্ষার্থীদের অধিকাংশেরই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হয় দ্বিতীয় লক্ষ্য। কারণ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির মানবন্টনে ৩০ মার্ক্স থাকে শুধু জীববিজ্ঞান এর ওপর। আর সামগ্রিক ভাবে পাস মার্ক্স পাওয়া লাগে। তাই মেডিকেল এ প্রস্তুতি নেয়া শিক্ষার্থীদের গণিতের দূর্বলতা ততটা সমস্যার কারণ হয় না। তবে বিষয় ভিত্তিক বেসিক জ্ঞান থাকলে এবং সঠিক প্রস্তুতি থাকলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তির সুযোগ পাওয়া খুবই সহজ।তাছাড়াও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গুলো অনুষ্ঠীত হয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর শেষে। তাই অতিরিক্ত প্রস্তুতির প্রয়োজন তেমন পড়ে না। মূল বই থেকে বেসিক জ্ঞান টা নিয়ে পূর্ববর্তী ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করলেই পরীক্ষা সহজ হবে আশা করি। 

তাছাড়াও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো অপেক্ষাকৃত সহজ বলে আমি মনে করি। প্রতি বছরই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এ টেকনিক্যাল ক্যাডার এ নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন থাকে। তাছাড়াও কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন কৃষি ভিত্তিক সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণীর চাকরির সুযোগ। শুধু তাই নয়, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও ভালো চাকরি পাবার সুযোগ থাকে। তাছাড়াও দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা থাকলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়-ই হবে একজন শিক্ষার্থীর সেরা সুযোগ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর