করোনা মহামারির মধ্যে কয়েক দফা পিছিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সোমবার (৪ অক্টোবর) থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে এরই মধ্যে জালিয়াতি চক্রের কয়েকটি সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা অনলাইনের বিভিন্ন গ্রুপে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র দেওয়ার কথা বলে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ক্যাম্পাসে চার স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
বিগত কয়েক বছরে ধরে রাবির প্রশ্ন ফাঁসের কোন অভিযোগ নেই। তবে কাল পরীক্ষার আগেই হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়ার প্রচারণা চালাচ্ছে একটি জালিয়াতি চক্র। এছাড়া প্রক্সি ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ভর্ভিচ্ছুদের পরীক্ষায় চান্স পাইয়ে দিতে কাজ করছে আরও কয়েকটি সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ, বি, ও সি ইউনিটের যে ৩৬ সেট প্রস্তাবিত প্রশ্ন+উত্তর একসাথে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সেটা এখন শেষ। আশা করছি পরীক্ষায় এতে করে শতভাগ মার্ক পাবা। কারণ তোমাদের পরীক্ষায় প্রস্তাবিত প্রশ্নগুলো থেকে প্রশ্ন আসবে। এবারের প্রস্তাবিত প্রশ্নগুলো প্রতি ইউনিটে মোট ১২ জন করে করেছে। ৩৬ সেট প্রশ্ন। সেখান থেকে ৩ সেট প্রশ্ন এ, বি ও সি ইউনিটে আসবে। তোমরা সেগুলা প্রাইভেট গ্রুপে পাবা। কারণ পাবলিকলি দেওয়াটা অনেক রিস্ক। যারা যারা প্রাইভেট গ্রুপে যুক্ত হবা, তারা তাদের এডমিট কাডের পিকচার+১৫০০ টাকা দিতে হবে। সবগুলো বাছাই করে তোমাদের প্রাইভেট গ্রুপে এড করবো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে ভর্তি পরীক্ষার আগ মুহূর্তে এক ছাত্রলীগ নেতার ফোনালাপ ফাঁস হয়। যেখানে ভর্তিচ্ছুক একজনকে ওই ছাত্রলীগ নেতা টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার নিশ্চয়তা দেয়। তাদের মধ্যে আড়াই লাখ টাকার চুক্তি হয়। এর আগে, ২০১৪ সালের ভর্তি পরীক্ষার সময় ঢাকা থেকে এক্সপার্টদের একটি গ্রুপ পরীক্ষায় জালিয়াতির উদ্দেশে মাইক্রোবাসে রাজশাহীতে আসে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে বিষয়টি জানতে পেরে তৎক্ষণাত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়। পরে তাদের ওই গাড়িতে করেই রাজশাহী থেকে ঢাকায় ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সূত্রে জানা যায়, সোমবার (৪ অক্টোবর) ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের ভর্তি পরীক্ষা। তিনটি শিফটে এই ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম শিফটের পরীক্ষা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয়ে সাড়ে ১০টায় শেষ হবে। দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে ১টায় শেষ হবে। তৃতীয় শিফটের পরীক্ষা বিকাল ৩টায় শুরু হয়ে শেষ হবে ৪টায়।
দ্বিতীয় দিন ৫ অক্টোবর ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষাও তিনটি শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া আগামী ৬ অক্টোবর ‘বি’ ইউনিটের (বাণিজ্য) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, ভর্তি পরীক্ষার সময় জালিয়াতির চক্রগুলো আরও সক্রিয় হয়ে উঠে। এবার ভর্তি পরীক্ষায় সন্দেহভাজন একাধিক ব্যক্তির ওপর আমাদের নজরদারি রয়েছে। যে তালিকায় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আগেও বিভিন্ন জালিয়াতির চক্র সক্রিয় ছিল। এখন তারা আরও শক্তিশালী। তাদের ঠেকাতে প্রশাসনের সর্তক থাকা জরুরি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবার ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয়ে আমরা খুবই সতর্ক। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ক্যাম্পাসে নজরদারি বাড়াতে বলেছি। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিবো।