জবিতে ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক ৬৯৫ জন

বিবিধ, ক্যাম্পাস

সাগর হোসেন, জবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 00:19:40

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ১৭ হাজার ৩৮ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৬৯৫ জন। অর্থাৎ ২৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। অথচ বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের নূন্যতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক থাকতে হবে। আবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে একটা অংশ থাকেন দীর্ঘসময় ধরে শিক্ষা ছুটিতে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ঠিকমতো না থাকার ফলে সেশনজট, নিয়মিত ক্লাস না হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। যা শিক্ষার্থীদের শিখনে এবং ভবিষ্যৎ জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

প্রতিষ্ঠানটির ৪৭তম প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট ৩৬টি বিভাগ এবং ২টি ইনিস্টিটিউটে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে পিছিয়ে থাকার দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে যৌথভাবে রয়েছে আইন ও ফিন্যান্স বিভাগ। সবমিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি বিভাগ ও একটি ইন্সটিটিউট এই মানদণ্ড বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগে সর্বমোট শিক্ষার্থী রয়েছে ১ হাজার ৬৭ জন। এর বিপরীতে পাঠদানে নিয়োজিত রয়েছেন মাত্র ২৪ জন শিক্ষক। সে হিসেবে এই বিভাগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১:৪৪। যা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মানদণ্ডের ধারে কাছেও নেই। ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরের অবস্থানে রয়েছে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ। এই বিভাগে ১ হাজার ১০৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২৭ জন। এই বিভাগে ৪১ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন একজন শিক্ষক। এছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে পিছিয়ে থাকার দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আইন ও ফিন্যান্স বিভাগ। প্রতি ৩৯ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে এই দুই বিভাগে শিক্ষক রয়েছেন একজন।

এছাড়া অন্য যেসব বিভাগে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে আন্তর্জাতিক মান নেই সেগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইসলামিক স্টাডিজ, দর্শন, মার্কেটিং, পরিসংখ্যান, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, সমাজবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, লোকপ্রশাসন, ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন, ভুগোল ও পরিবেশ এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগ। এছাড়া শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে আন্তর্জাতিক মান নেই। শিক্ষক- শিক্ষার্থী অনুপাতে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ। এই বিভাগে ২১১ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন ২০ জন শিক্ষক অর্থাৎ প্রতি ১১ জন শিক্ষার্থীর জন্য এই বিভাগে একজন করে শিক্ষক রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অবশ্যই আমাদের শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কমানোর কোন বিকল্প নাই। আমরা ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে কথা বলেছি। আমাদের আবাসনগত অনেক সংকীর্ণতা আছে, এমতাবস্থায় আমি শিক্ষক বাড়ানোর পরিবর্তে শিক্ষার্থী কমানোর দিকে মতামত ব্যক্ত করেছি। তবে এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, খুব দ্রুত এর সমাধান করা সম্ভবপর হবে না।

এব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ইউজিসিতে আমাদের অনেক শিক্ষকের নিয়োগ আটকে আছে। আমরা ইউজিসির সঙ্গে কথা বলে আপাতত এসব নিয়োগ ছাড় দিতে বলছি। তাহলেও অনেকটা অনুপাত কমবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতকরণে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কমানো হবে নাকি শিক্ষক নিয়োগ বাড়ানো হবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জগন্নাথ তার নির্দিষ্ট আঙ্গিকে চলবে। আমাদের সিন্ডিকেট আছে, একাডেমিক কাউন্সিল আছে, এ বিষয়ে আমার একার তো সিদ্ধান্ত দেওয়ার কিছু নেই। আমরা সবাই মিটিং করেই সিদ্ধান্ত নিবো যাতে আমাদের শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত হয়।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ফেরদৌস জামান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামো ছাড়াই অনেক ডিপার্টমেন্ট খোলা হয়েছে। কিছু ডিপার্টমেন্টের পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। আমরা তাদের কোনো শিক্ষক নিয়োগ আটকে রাখিনি। আমরা শিক্ষক ছাড় দেওয়ার জন্য যেমন অবকাঠামো এবং মানদণ্ড অনুসরণ করি সেটা না থাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষক ছাড় দেওয়া যাচ্ছে না। কিছুদিনের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ সমাপ্ত হবে, তখন অনেক স্পেস বাড়বে। নতুন ক্যাম্পাসে গেলে এই শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের বৈষম্যটি থাকবে না। আপাতত পুরাতন অবকাঠামোগুলো সংস্কার করে স্পেস বৃদ্ধি করলে অনেকাংশে সমস্যাটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর