ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলের ক্যান্টিনগুলোতে খাবার রান্নার সময় ব্যবহার করা হচ্ছে টেস্টিং সল্ট বা ‘স্নায়ু বিষ’ যা স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। হলের ক্যান্টিনের বাইরে ও হলের খাবারের দোকানগুলোতে ব্যবহার হচ্ছে এই উপাদানটি। টেস্টিং সল্ট ব্যবহারে খাবার মুখরোচক হলেও নিয়মিত টেস্টিং সল্ট গ্রহণে নানা ধরনের জটিল রোগ বাসা বাঁধে মানব শরীরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর ক্যান্টিনগুলোতে ঘুরে টেস্টিং সল্ট ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। উপাদানটি খিচুড়ি, পোলাওসহ মাছ ও মাংসের তরকারিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে এসব খাবার গ্রহণে দিন দিন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক রাঁধুনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘আমরা তরকারির স্বাদ বাড়ানোর জন্য হালকা টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করি। এছাড়াও, যখন তরকারিতে হলুদ, লবন বা মসলার পরিমাণ কমবেশি হয়ে যায় তখন এটা দিয়ে থাকি।’
সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাবির একজন শিক্ষার্থীর জন্য দৈনিক ২৮০০- ৩০০০ কিলোক্যালরি শক্তি প্রয়োজন যেখানে শিক্ষার্থীরা তিনবেলা খেয়ে দৈনিক ১৮২১ কিলোক্যালরি পাচ্ছেন। রাতে ঠিকমতো না ঘুমানোর অভ্যাস, দৈনিক খাবারে কিলোক্যালরি কম, অন্যদিকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই খাবার খেয়ে রীতিমতো ধুঁকতে হচ্ছে হলের অনেক শিক্ষার্থীকেই।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইয়ারুল কবীর বলেন, ‘মাসে দুএকবার টেস্টিং সল্ট খাওয়াতে শরীরে তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না, তবে নিয়মিত খাওয়াতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তো থেকেই যায় এবং দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই, এটিকে যতটুকু সম্ভব এড়িতে যেতে হবে। কিন্তু, শিক্ষার্থীরা তো জানবে না খাবারে এটা দেয়া হয়েছে কিনা। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত তদারকি করতে হবে।’
উল্লেখ্য, টেস্টিং সল্টের কেমিক্যাল নাম হলো মনো সোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি), যা একটি এল-গ্লুটামিক এসিডের ডেরিভেটিভ। প্রতিদিন টেস্টিং সল্ট ব্যবহারে বমিভাব, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, খাবারে অরুচি, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, শরীরের অংশ বিশেষের কাঁপুনি, বুকে চাপ অনুভব করা, দুর্বলতা, হাতের তালু ও গলায় জ্বলুনি, নিঃশ্বাস নেয়ার সময় হাঁপানির মতো শব্দ, বুকে কাঁপুনি, হৃদস্পন্দনের পরিবর্তন, শ্বাস নিতে কষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
এছাড়াও মানুষের মস্তিষ্কের নিউরণ ক্ষতিগ্রস্ত করে পার্কিনসনস্ ডিজিজ ও আলঝাইমারস্ ডিজিজ নামে সড়বায়ুতন্ত্রের মারাত্মক অসুখগুলো আক্রমণ করে। এটা শুধু মস্তিষ্কের নিউরণ বা সড়বায়ুকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে ক্ষান্ত থাকে না। এটি শরীরে হরমোনের তারতম্যও ঘটায়। আর এই সমস্যাটিও কম মারাত্মক নয়।