ঢাবি শতবর্ষের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত, নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

, ক্যাম্পাস

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-23 04:31:30

জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনে’র শতবর্ষের মিলনমেলার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের পথযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই’ স্লোগানে শুরু ওই মিলনমেলা’কে কেন্দ্র করে নানা অব্যবস্থাপনারও অভিযোগেরও কমতি ছিল না।

শনিবার (১২ মার্চ) সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মিলনমেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণতম শিক্ষার্থী মতিউল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শুরু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পথযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে রাখেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এতে যে শুধু সম্পদ ও পুঁজি চলে যাচ্ছে তা নয়, মানবিক সম্পদও চলে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পরে যে তরুণ শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন তারা অনেকেই বিদেশে চলে গেছেন আর ফেরত আসেননি। মেধাবীরা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে পারে। দেশে মেধার বিকাশ ঘটানোর পরিবেশ যেন তৈরি হয় সে কাজে মনোযোগী হওয়া অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের একটা বড় কর্তব্য।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রসাশন) ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ কে এম মাকসুদ কামাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামানই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একে আজাদ, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সদস্যবৃন্দসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।

ছবি: বার্তা২৪.কম

উঠেছে নানা অব্যবস্থার অভিযোগ: জমকালো আয়োজন থাকলেও উপহার সামগ্রীর নিম্নমান, অনুষ্ঠানসূচির হেরফের, বিভিন্ন সামগ্রীর অপ্রতুলতা ও ঠিক সময়ে টোকেন না পাওয়ার অভিযোগের মত অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও ‌অনুষ্ঠান করা হয়েছে একদিন।

অ্যালামনাইগনের অভিযোগ, একদিন হিসেবে অনুষ্ঠানের আয়োজন আরও জাঁকজমকপূর্ণ করা যেত।

শফিকুল আলম রাসেল নামের একজন অ্যালামনাই গ্রুপে পোস্ট করেন, ‘শতবর্ষের মিলনমেলা’ উপলক্ষে আজ আমার সিরিয়াল অনুযায়ী উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করতে গিয়ে একইসঙ্গে হতাশ ও লজ্জিত হয়েছি। দুপুর ৩টার পর বুথের সামনে গিয়ে দেখি, উপহার সামগ্রীর সংকটের কারণে তা ঠিকমতো বিতরণ করা হচ্ছে না। আমার মতো আরও অনেককেই অপেক্ষা করতে বলা হয়। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সেগুলো পেলেও এর মধ্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ছিল না।’

আনোয়ার আজিম নামের আরেকজন অ্যালামনাই লিখেছেন, ‘আজ উপহার সামগ্রী গ্রহণ করলাম। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তির এই অনুষ্ঠানের উপহার সামগ্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি বলেই আমার বিশ্বাস। কালো রঙের চটের ব্যাগে পানি লাগলেই রঙ উঠে নষ্ট হবে এবং ব্যবহারকারীর পোশাক নষ্ট করবে। সর্বোপরি দুই দিনের পরিবর্তে অনুষ্ঠান একদিন করায় বাকি একদিনের উদ্বৃত্ত অর্থ থেকেও ভালো কিছু উপহার দেয়া যেত। হতে পারত টি-শার্ট, ক্যাপ বা মগ, যা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যেত। এ বিষয়ে অ্যালামনাই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ‌অ্যালামনাই বলেন, এত আয়োজনের কথা শুনে এসে সকালের খাবার দেখে হতাশ হতে হলো। এত নিন্মমানের খাবার আমরা আশা করিনি। এরকম একটা অনুষ্ঠানে পরোটা-ভাজির মতো খাবার মোটেও শোভনীয় নয়। খাবারের প্যাকেট খুলে যা বুঝতে পারলাম এটি বোধহয় ভোররাতে প্যাকেট করা হয়েছে। পরোটা এতই শক্ত ছিল যে টেনে ছেঁড়া যাচ্ছিলো না। পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ প্যাকেট করে রাখার কারণে সবজি থেকে অস্বাভাবিক গন্ধ উঠে। হালুয়াটা ঝোল হয়ে গিয়েছে। আমার পাশের টেবিলে বসা এক ভাই বললো তার প্যাকেটের ডিমটি থেকে পানি পড়ছিলো। এত টাকা দিয়ে করা এত বড় একটি অনুষ্ঠানের সকালের নাস্তাই অনুষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করেছে।

‘এত বড় একটা অনুষ্ঠানে এরকম অসুন্দর খাবারের স্মৃতি রাখতে নিশ্চয়ই এতজন অ্যালামনাই এখানে আসেননি।’, বলে মন্তব্য করেন ওই প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

ছবি: বার্তা২৪.কম

এর আগে মিলন মেলা উপলক্ষে করা এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, শতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে পৌঁছানোর কথা ছিল সেখানে আসতে পারেনি। আমরা দেখেছি বিশ্বের ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিংয়ে আমাদের ঢাবি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়কে ১০০ র‍্যাংকিংয়ের ভেতরে আনতে আমাদের সংগঠন কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাড়লেও সেগুলোর ধারণক্ষমতা ও সক্ষমতা বাড়েনি। তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০-৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী অর্থাভাবে যথাযথভাবে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে না। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন তাদের জন্য কাজ করবে।

তিনি বলেন, আমরা বছরে সাড়ে তিন কোটি থেকে চার কোটি টাকা বৃত্তি প্রদান করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চের জন্য যে বাজেট প্রয়োজন সে পরিমাণ বাজেট সরকার থেকে আসছে না। আমরা সেখানে ‌অনুদান দিতে চাই।

উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের এই মিলনমেলা ২০২১ সালের ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর দুইদিনব্যাপী হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। পরে চলতি বছরের ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি একই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পুনরায় একই কারণে স্থগিত করা হয়। সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ঢাবির নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনস্থ অ্যালামনাই ফ্লোরে অ্যাসোসিয়েশনের এক সাধারণ সভা শেষে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত এই তারিখ অনুযায়ী আজ ১২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর