ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযোগ তোলেন অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আবু তালিব। নির্যাতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে ‘সংবাদ সম্মেলনও করে তালিব। তোলেন নানা অভিযোগ এবং বর্ণনা করেন সেই দিনের ঘটনাও। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন।
ড. মো. আবদুস সোবহান তালুকদার ছাড়াও আবাসিক শিক্ষক ড. সাইফুল হক, ড. আব্দুল খায়ের এবং তানজিল শাহ তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন।
গত শুক্রবার (১১ মার্চ) থেকেই হলের বাইরে অবস্থান করছেন তালিব। আজ মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) হলে উঠতে পারেননি, বলে আবু তালিব বার্তা২৪.কম’কে নিশ্চিত করেন।
তালিব অভিযোগ করেন, নির্যাতনকারীদের পক্ষ থেকে হলের সিনিয়ররা প্রতিনিয়ত আমাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা আমাকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি বন্ধ করে দিয়ে মধ্যস্থতা করে নেয়ার কথা বলেছে। তা না করলে ‘আমি মাদক গ্রহণ করি’ এ মর্মে মামলা দেবে। এছাড়া আমার পরিবারের সদস্যদেরও অপমান করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
হল সূত্রে জানা যায়, হলটির ২০১ (ক) নম্বর কক্ষে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আবু তালিব, সেখানে ১৪ জন শিক্ষার্থী থাকেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেছে তদন্ত কমিটি। তবে আলাদা আলাদা নয়, সবার সঙ্গে একসঙ্গে কথা বলা বলেছেন কমিটির সদস্যরা। সবাইকে লিখিত মতামত দিতে বলা হয়েছে। সেখানে হলের সিনিয়র যারা নির্যাতনকারীদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত তাদের পরামর্শ অনুযায়ী লিখিত মতামত লিখে তদন্ত কমিটিকে দেওয়া হয়েছে।
কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আবু তালিব বলেন, সবাইকে একসঙ্গে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে ভয়ে কেউ সত্য বলবে না। সিনিয়ররা যেটা লিখে দিয়েছে সেটাই তারা তদন্ত কমিটিকে দিয়েছে। এখানে সত্য ফুটে উঠবে না। এছাড়া যেখানে তদন্ত কমিটির সদস্যরাই আমাকে মধ্যস্থতা করতে বলছে, সেখানে বুঝা যাচ্ছে রিপোর্ট কেমন হতে পারে।
এ দিকে আবু তালিবকে মধ্যস্থতা করতে বলেছেন তদন্ত কমিটির সদস্য হলের আবাসিক শিক্ষক। তিনি তালিবকে বলেছেন, ‘মিউচুয়াল করে দিই তুমি হলে থাকো।’ আমি স্যারকে জানিয়েছি, ‘হলে থাকলে গেস্টরুম প্রোগ্রাম করতে পারব না এবং বৈধভাবে থাকতে চাই।’ কিন্তু স্যার আমাকে বলেছেন, ‘এখানে থাকতে হলে এগুলো একটু করতে হবে। থার্ড-ফোর্থ ইয়ারে এগুলো কমে যাবে।’
এদিকে নির্যাতনে ঘটনা তদন্ত কমিটির প্রধান আবাসিক শিক্ষক ড. মো. আবদুস সোবহান তালুকদার বলেন, ওই শিক্ষার্থী যদি নিয়ম মেনে হলে থাকতে চায় কিংবা উঠতে চায়, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি যেন আমাকে অথবা প্রাধ্যক্ষ জানায় সেটা বলেছি। সেটি বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আর সেটা অসম্ভবও নয়। হলে উঠলে কোনো ছাত্রনেতা বা কেউ তাকে নির্যাতন করবে বলে আমার মনে হয় না, বলে মনে করেন ওই আবাসিক শিক্ষক।
আবু তালিবকে হলে তোলার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি’না এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসাইন বার্তা২৪.কম’কে বলেন, বিষয়টি দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এটি নিয়ে কাজ করছেন। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ঢাবির মল চত্বরে ধূমপান করতে দেখে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২০১(ক) নাম্বার রুমে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) গভীর রাতে ওই হলের ছাত্র আবু তালিবকে ডেকে এনে ধোঁয়া না ছেড়ে পুরো সিগারেট শেষ করার নির্দেশ দেন, সেই সঙ্গে তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার বলে অভিযোগ উঠে একই হলের ২০১৮-১৯ সেশনের চারজন ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে।