ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকদের অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ লাভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি ও উচ্চতর গবেষণা বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেছে একাডেমিক কাউন্সিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে সুপারিশটি।
কেন হঠাৎ পিএইচডি বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজন পড়ল বিশ্ববিদ্যালয়টির, পড়লেও কেন এতদিন পর? এবিষয়ে জানার চেষ্টা করেছে বার্তা২৪.কম। এমন সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও শিক্ষকদের মৌলিক গবেষণায় উৎসাহ দিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বার্তা২৪.কম-কে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
হঠাৎ করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে ডক্টরেট ডিগ্রি ছাড়া শিক্ষকই নিয়োগ দেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চতর শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে যেমন জ্ঞান বিতরণ হবে, তেমনি জ্ঞান উৎপাদনও হবে। গবেষণার মাধ্যমে তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। শতবর্ষে এসে আমরা চিন্তা করেছি, শিক্ষক পিএইচডি ডিগ্রিধারী হলে তিনি শিক্ষার্থীদের যেমন ভালোভাবে সার্ভেলেন্স করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক র্যাংকিং নির্ধারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষকদের একটি সূচকও ধরা হয়, সেদিকে ঢাবি এগিয়ে যাবে। এসব বিষয় মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিলম্বে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে, অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন- আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। এখন অনেক সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়েছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে এসে আমরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার যথোপযুক্ত সময় বলে মনে করেছি।
সিদ্ধান্ত ভালো, তবে বিলম্বে নেওয়া হয়েছে এমন মন্তব্য টেনে বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার ক্ষেত্রে বিশেষ করে গবেষণায় ম্যাচুরিটি দরকার এবং ভালো মানের পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে এই ম্যাচুরিটিটা খুব ভালোভাবে তৈরি হয়।
অধ্যাপক ড. তানজিম বলেন, প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পিএইচডি ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করা উচিত। পিএইচডি করার ফলে যে গবেষণার অভিজ্ঞতা তৈরি হয় তা একজন প্রভাষক বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চর্চার সুযোগ পাবেন, এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ও উপকৃত হবে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন নতুন সিদ্ধান্তকে ভাল বলে উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থা এগোচ্ছে। শতবছরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিবর্তন হয়নি, সেটি হলো- নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরিবর্তন। তবে যে নিয়ম করা হয়েছে, তা আরও আগেই করা উচিৎ ছিল।
ওই অধ্যাপক পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় বেশ কিছু ইন্সটিটিউট কথা টেনে এনে বলেন, ওই সব জায়গাতে ফ্যাকাল্টি মেম্বার হতে হলে পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রি লাগে। প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া উচিত সাময়িকভাবে এবং সেখান থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে হলে পিএইচডি ডিগ্রি বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে, যার মাধ্যমে চাকরিটি স্থায়ী হবে।
তারপরেও শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক পদোন্নতিতে’ নতুন সিদ্ধান্ত সাধুবাদ জানান অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।