ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় নির্যাতনের অভিযোগ ওঠা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস.এম) হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রাজিমুল হক রাকিবকে এবার হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। পরে ওই ছাত্র’কে রাতেই হল প্রশাসনের উদ্যোগে আবার হলে তোলা হয়।
রাজিমুল হক রাকিব বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০১৭-১৮ সেশনের ম্যানেজমেন্ট এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী।
গত সোমবার (৪ মার্চ) রাতে তার বইপত্র ও মালামাল স্তূপ করে বাহিরে ফেলে দেয়। এর আগে গত শুক্রবার (১ মার্চ) রাতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদারের বিরুদ্ধে রাকিব তাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। পরে তিনি (রাকিব) হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্রও জমা দেন। ওই ঘটনার জের ধরেই তানভীরের কর্মীরা তাকে হল থেকে বের করে দেন বলে জানান রাকিব।
রাকিব আরো বলেন, ইফতারের পর রাত সাড়ে ৭ টার দিকে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদারের ছয় থেকে সাতজন কর্মী আমার কক্ষে প্রবেশ করে আমার জিনিসপত্র বের করে দেয়। এসময় ওরা মারমুখী অবস্থানে ছিলো বলে আমি তখন প্রতিবাদ করতে পারিনি এবং চুপচাপ বেরিয়ে আসি।
তিনি আরও বলেন, আমি ৪র্থ বর্ষে উঠেছি; আমার চাকরির প্রস্তুতিসহ অনেক কিছুই করার থাকে। এদিকে তাদের (ছাত্রলীগের) দৈনিক অন্তত ১ টা প্রোগ্রাম তো থাকেই। আমি তাদের (ছাত্রলীগের) কমান্ড মানি না এবং প্রোগ্রাম করি না বলে তারা বলে আমি বেয়াদব! তাছাড়া আমি প্রোগ্রামই করব কেন? আমি তো হলের আবাসিক ছাত্র, আমার বৈধ কার্ড আছে!
পরে প্রশাসন তাকে আবার হলে তুলেছে জানিয়ে রাকিব বলেন, হল প্রাধ্যক্ষ আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। হল থেকে বের করে দেওয়ার পর প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওই রাতেই হল প্রশাসনের উদ্যোগে হলে ফিরে এসেছি।
এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের দায়িত্বরত আবাসিক শিক্ষক শিবলী নোমান বলেন, রাকিবের নিরাপত্তার বিষয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে সেটার তিনি দায়িত্ব নেবেন। এবং এ ঘটনা তদন্ত করার বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে বলে, জানান তিনি।
এদিকে হলটির ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদার বলেন, রাকিব আমার স্নেহের ছোট ভাই। ওকে আমি রুমে তুলে দেব। তারপর যদি ওই রুমে ওর কোনো সমস্যা হয় সেটা আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে দেখব।
তানভীর শিকদার আরও বলেন, তার (রাকিবের) গায়ে হাত তোলা হয়েছে কি না এটার একটা লিগ্যাল তদন্ত ও সমাধান হোক সেটা আমি চাই। রাকিব উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাংবাদিকদের অভিযোগ দিয়েছে। এখন আমিও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেব, কেন এই শিক্ষার্থী আমার উপর মারধরের মিথ্যা অভিযোগ আনল। এটা যাতে প্রশাসন তদন্ত করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল কমিটি দেয়ার সময় থেকে তানভীর হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে মাস দুয়েক হলো দায়িত্ব নিয়েছেন। তানভীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।
এ ব্যাপারে সাদ্দাম হোসেন বলেন, হলে কে থাকবে আর কে থাকবে না; সেটা হল প্রশাসনকেই দেখতে হবে। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটালে আমরা তার ব্যবস্থা নেব।
এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. মজিবুর রহমান বলেন, ওই ছাত্রকে দায়িত্ব নিয়ে হলে তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কে বা কারা তাকে হল থেকে বের করে দিয়েছে সেটার জন্য তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।