প্রাণ ফিরে পেল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ

বিবিধ, ক্যাম্পাস

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 11:47:28

গেল দু’বছর করোনা মহামারির কারণে রমনার বটমূলে অনুষ্ঠিত হয়নি ছায়ানটের বর্ষবরণ। এ বছর করোনা মহামারি উন্নতি হওয়ায়, রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণে সেই পুরোনো সুর ফিরে পেয়েছে। শুরুতে ভোরের বিভিন্ন রাগের ওপর বেহালা, সেতার, বাঁশি ও এসরাজসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বরণের ধ্বনি দেওয়া হয়। যন্ত্রবাদনের পরপরই পরিবেশন করা হয়েছে সম্মিলিত কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত ‘মন, জাগো, মঙ্গল লোকে’।

“রমনার বটমূলে কথা হবে প্রাণ খুলে
জানিয়ে দিলাম আমি তোমাকে
এসো বাঙলির সাজে হাতে যেনো চুড়ি বাজে
খোঁপায় যেনো বেলীফুল থাকে
দেখা হবেরে হবে, দেখা হবেরে হবে
দেখা হবেই হবে পহেলা বৈশাখে।”

প্রিয় মানুষটির সঙ্গে রমনার বটমূলে, এক বাঙালি সাজে ফেলে আসা দুটি বছরে দেখা না হলেও ১৪২৯ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখে গিয়ে দেখা হয়েছে। এমনই একজন কথা সাহা ও সাব্বির দাশ (ছদ্মনাম), পড়ছেন ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। গেল দু’বছর বাসাতে থাকাতে একসঙ্গে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে পারেন নি। তবে এ বছরে, এক সঙ্গে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে বাঙালি সাজে রমনার বটমূলে বৈশাখ উদযাপনে যেন পরিপূর্ণতা পেয়েছে এ প্রেমিক যুগলের। যেন উল্লেখিত গানটির সঙ্গে এবারের বৈশাখ অনেক মিল রয়েছে বলে হাসতে হাসতে বলেন, তারা।

‘নব আনন্দে জাগো’ প্রতিপাদ্য’কে সামনে রেখে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বটমূলে রাঙা গালাপ ও বৈশাখী সংগীতানুষ্ঠান মাধ্যমে রমনার বটমূলে শুরু হয় ছায়ানটের বর্ষবরণ। তা শেষ হয় সকাল সাড়ে ৮টায় গিয়ে। প্রতি বছর ১২৫ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করলেও স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে এবার ৮৫ জন শিল্পী অংশ নেয়।

আয়োজনে মোট ৩৭টি গান-কবিতায় নববর্ষকে বরণ করা হবে। প্রতিপাদ্যের ওপর ভিত্তি করে একক ও সম্মিলিত গান এবং অন্যান্য গান ও কবিতা সাজানো ছিল এবারে ছায়ানটের বর্ষবরণের পুরো অনুষ্ঠান।

দর্শনার্থীদের জন্য ছিল জরুরি চিকিৎসাসেবা। নারী, বয়স্ক ও শিশুদের জন্য রয়েছে বিশ্রামাগার। কেউ হারিয়ে গেলে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ সেবা। তবে রমজান মাস হওয়ায় এবার ছিল না কোন খাবারের দোকান। এর আগে এক সংবাদ সম্মেলন রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষা করে, সকলকে নিয়ে নব আনন্দে জেগে ওঠার আহ্বান জানান ছায়ানট।

বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল চোখে পড়ার মত। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে তাই রমনাসহ পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, ছায়ানটের আয়োজনে প্রথম রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সময় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। এরপর কেবল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈরী পরিবেশের কারণে অনুষ্ঠান হতে পারেনি।

এছাড়া ২০০১ সালে রমনার গানের অনুষ্ঠানে জঙ্গিরা ভয়াবহ বোমা হামলা এবং দু’বছরের করোনা মহামারির কারণে অনুষ্ঠিত হয় নি ছায়ানটের বর্ষবরণ। গত দু’বছর ছায়ানট অনলাইনে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলেও ছিল না পুরোনো আমেজ।

ছায়ানট: ছায়ানট বাংলাদেশের অন্যতম সংস্কৃতিক সংগঠন। ১৯৬১ সালে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উৎসব পালন করা ছাড়াও এই সংগঠন বাদ্যযন্ত্র, সঙ্গীত, নৃত্য প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান ও সঙ্গীত বিদ্যালয় পরিচালনা করে থাকে।

১৯৬১ সালে রবীন্দ্র-জন্মশতবার্ষিকী উৎযাপনের পর একটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন কয়েকজন সংগঠক। তাদের মধ্যে মোখলেসুর রহমান (সিধু ভাই নামে পরিচিত), শামসুন্নাহার রহমান, সুফিয়া কামাল, ওয়াহিদুল হক অন্যতম। সাঈদুল হাসানের প্রস্তাবে সংঠনটির নামকরণ করা হয় ছায়ানট।

এ সম্পর্কিত আরও খবর