নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সরব হয়ে উঠছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সম্প্রতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদের এক বক্তব্যের পর গত রোববার সন্ধ্যায় টিএসসি এলাকায় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীর ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেন ৷ ওই ঘটনার প্রতিবাদ ও সাইফ মাহমুদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে আজ মঙ্গবার (২৪ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল৷ সেখানে যাওয়ার পথেই তাদের ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
এদিকে ছাত্রলীগের রয়েছে পাল্টা অভিযোগ। ছাত্রদলের ওপর এই হামলাকে ‘প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, রাজাকারদের তল্পিবাহক ও সন্ত্রাসের ডিস্ট্রিবিউটর ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল তাদের সহিংস সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ বিঘ্নিত করছে ৷ এর ধারাবাহিকতায় দেশি অস্ত্র নিয়ে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে ৷ শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপদ শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করার স্বার্থে সব মতের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছাত্রদলের সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার জানান, ছাত্রদলের একটা গ্রুপ ঢাকা মেডিকেল সংলগ্ন ইমারজেন্সি রাস্তায় একটি মিছিল বের করে শহীদ মিনারের দিকে আসতে থাকে। তখন ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মানসুরা আলমসহ অন্তত অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে ছাত্রদল জানিয়েছে। এদিকে ছাত্রলীগের ৫ জন কর্মী আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতারা।
সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের নেতা শরিফুল ইসলাম শফু বলেন, আমাদের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট করে কারো নাম বলতে পারেননি তিনি।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, দুই দিন ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসের মহড়া দিচ্ছে বলে মিছিলে আমরা কোনো স্লোগান পর্যন্ত দিইনি ৷ পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে টিএসসির দিকে যাচ্ছিলাম ৷ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিলেন ৷ তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলি ৷ বলি যে ‘আমরা তো শান্তিপূর্ণভাবে যাচ্ছি, আমাদের অপরাধটা কী?’
তিনি আরও বলেন, নেতা–কর্মীরা আমাদের মানবঢাল তৈরি করে ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে আসেন ৷ হামলায় গুরুতর আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছাত্রদলের সেলিম মাহমুদ, এ বি এম এজাজুল কবির, সজীব মজুমদার ও ইব্রাহিম৷ ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের দুই হাত ভেঙে গেছে ৷ নারী নেত্রীর ওপর হামলাকারী ব্যক্তিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হতে পারে না ৷ তারা বহিরাগত সন্ত্রাসী ৷ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সরাসরি নির্দেশে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ৪০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তবে এদের মধ্যে কেউ গুরুতর নয়।
পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলার সময় বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বিএনপি নেতারা মাঠ গরম করে বক্তব্য দিচ্ছেন। সরকার প্রধানের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিষয়টি নিয়ে কড়া বক্তব্য দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ। তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে দাবি করে চটেছে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের এমন ঘোষণার পর থেকেই পরিস্থিতি অনেকটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করে আসা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।