আবাসন সংকটে শিক্ষার্থীদের মানবেতর জীবন যাপন

বিবিধ, ক্যাম্পাস

ইবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 23:28:08

স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। প্রতিষ্ঠার পর ৩৯ বছর পার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ আবাসিক হওয়ার কথা থাকলেও আজও সেটা হয়ে ওঠেনি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর প্রায় ৭৫ ভাগই আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবাসন সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী মেস কিংবা বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়। এসব মেস ও বাসাগুলোতে পরিবেশ নিম্নমানের, প্রতিনিয়ত লোডশেডিং এবং ন্যূনতম সুবিধা না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীদের অনেকেই কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মেস কিংবা বাসাভাড়া করে থাকেন। কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যথাক্রমে ২৪ ও ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন বাসে করে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। এতে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত সময় নষ্ট হয় পাশাপাশি পড়াশুনার ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরানুর রহমান বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টি কিংবা শীত উপেক্ষা করে আমাদের ক্যাম্পাসে আসতে হয়। প্রতিদিন যাতায়াতে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয় এতে আমাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত করে’।

প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছর পার করলেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখন পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে মাত্র ৭টি হল। এরমধ্যে চারটি ছাত্র ও তিনটি ছাত্রী হল। এছাড়া শেখ রাসেল হল নামে একটি ছাত্র হল নির্মাণাধীন রয়েছে। সবমিলিয়ে, সাতটি হলের আসন সংখ্যা মাত্র দুই হাজার ৭৭৫টি।

সাদ্দাম হোসেন হলে ৪৭৫, শহীদ জিয়াউর রহমান হলে ৪০০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৩৬৪, লালন শাহ্ হলে ৩৮৮, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৩৯৮, বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ৪৮০ জন ও শেখ হাসিনা হলে ২৭০ জন শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন সুবিধা রয়েছে।

এদিকে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আবাসিক হলগুলো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। ক্ষমতায় থাকা দলের ছাত্র সংগঠনগুলো আবাসিক হলসমূহ নিয়ন্ত্রন করে আসছে। বিশেষ করে ছাত্র হল। ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রনে থাকার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সিট পায় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর ছত্র ছায়া ছাড়া হলে সিট পাওয়া মুশকিল বলেও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ্ হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবাসিক ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দলমতের ভিন্নতা থাকতেই পারে। তাই বলে তারা কি হলের আবাসিক ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হবে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

আবাসন সংকটের কারণে ছাত্রদের থেকে ছাত্রীরা বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ছাত্রীদের হলের অনেক রুমে একসিটে দুজনকে থাকতে হচ্ছে বলে জানা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের ৪৮০টি আসনের বিপরীতে রয়েছে ৭০০ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৩৯৮ আসনের বিপরীতে রয়েছে ৭২১ জন এবং দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ২৬০ আসনের বিপরীতে রয়েছে ৩৮৭ জন ছাত্রী রয়েছে। এতে প্রতি আসনেই প্রায় দুজন করে ছাত্রীকে থাকতে হচ্ছে।

এছাড়া হলে নতুন ছাত্রীদের জন্য রয়েছে গণরুমের ব্যবস্থা। প্রতিটি গণরুমে ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থীকে একসাথে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। হলের বড় আপুরা প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের গণরুমে থাকতে বাধ্য করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে বেগম ফজিলাতুনন্নেসা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফারজানা ত্বন্নি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সব থেকে বেশি ভাবতে হয় থাকার সমস্যা নিয়ে। একরুমে গাদাগাদি করে থাকার কারণে আমরা ঠিকমত পড়াশুনা ও ঘুমানোর সুযোগ পায় না। কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের আবাসন সংকটের বিষয়টি আমলে নিলে হয়ত আমরা এই অশান্তি থেকে মুক্তি পেতাম।

আবাসন সংকটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেন হলের বর্তমান প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান বার্তা২৪কে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট চরম পর্যায়ে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশেষ করে মেয়েরা নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা বেশি হলমুখি হচ্ছে। ফলে দিনের পর দিন হলের সমস্যাটি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে’।

এদিকে আবাসন সংকটের কথা স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বার্তা২৪কে বলেন, ‘পরিবহন নির্ভর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ব্যবস্থা একটি বড় সংকট। তবে সংকটের কবলে বেশি দিন থাকতে হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। আমাদের ৫০০ কোটি টাকার মেগা প্রজেক্টে ৪ টি বহুতল হল পাশ হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে। এতে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা ভোগ করতে পারবে’।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর