ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভেঙে দু’টি করবী ফুলের গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। ইন্সটিটিউটের পরিচালক বলছে, যা কিছু হচ্ছে নিয়ম মেনেই হচ্ছে।
সাধারণত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ কাটতে গেলে গাছপালার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা আরবরি কালচার সেন্টারকে অবগত করতে হয়। পরবর্তীতে তাদের তদারকি সাপেক্ষে গাছ কাটার বিষয়টি সম্পন্ন হয়ে থাকে। অভিযোগ উঠেছে গাছ দুটো কাঁটার ক্ষেত্রে এমন ব্যতয় ঘটেছে। জানা যায়, গত সোমবার (৪ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়টির আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের গাড়ি রাখার জন্য পার্কিং -র জায়গা বৃদ্ধিতে ওই গাছ দুটো কাঁটা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ছাত্রলীগের সভাপতি মানস মন্ডল অভিযোগ করেন, বর্তমান পরিচালক ভাষা ইনস্টিটিউটের সিএন্ডডি কমিটির অনুমতি ও বিশ্ববিদ্যালয়টির আরবরি কালচার সেন্টারকে অবগত না করেই তার একক সিদ্ধান্তে গাছগুলো কেটেছেন।
এদিকে গাছ দুটো কাঁটায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। শিশির মনির নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে গাড়ি পার্কিং বানানোর অজুহাতে কেটে ফেলা হয় ত্রিশ বছরের পুরনো দু’টি করবী গাছ। গাছ অক্ষত রেখে পার্কিং তৈরির চিন্তা কি করা যেতো না?
মারিয়াম মুন্নী নামে আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, আমাদের ইন্সটিটিউটে পূর্বেও এই জায়গার গাছ কাটা হয়েছিল। এখন আবার পার্কিং এর জায়গা বরাদ্দ বলে ৩০ বছর পুরনো করবি গাছ (ফুল গাছ) কাটা হচ্ছে। খুবই দুঃখজনক। গাছটা খুব সুন্দর দেখাতো।
এদিকে ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ও সিএন্ডডি সদস্য ড. সায়েদুর রহমান বলেন, পার্কিং বাড়ানোর জন্য অনুমোদন দিয়েছে ঠিক কিন্তু গাছ কাঁটার কোন অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সব সময় একক সিদ্ধান্ত নেন, পরবর্তীতে সিএন্ডডি সদস্যদের উপর তা চাপিয়ে দেয়।
অধ্যাপক সায়েদুর আরও বলেন, ৩০ বছর বয়সী করবী গাছটির চোখের সামনে মৃত্যু ঘটেছে; ফুলে ভরা ছিল গাছটি। মুহূর্তের মধ্যে ফুলসহ কেটে ফেলা হল, সত্যি বিষয়টি মর্মান্তিক। এই মুহূর্তে আমাদের কোন পার্কিং -র প্রয়োজন ছিল না। তাছাড়া পার্কিং করা হলেও গাছগুলো থাকলে খুব একটা অসুবিধা হত না বলে তিনি মনে করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির বলেন, আমার একক কোন সিদ্ধান্তে কোন কিছুই হচ্ছে না। যা কিছু হচ্ছে সিএন্ডডি কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে হচ্ছে। তাছাড়া ভবন কাঠামো অনুযায়ী গাড়ির পার্কিং থাকে। সেই মোতাবেক পার্কিং তৈরি করা হচ্ছে।
গাছ কাটার বিষয়ে অধ্যাপক রেজাউল করিম ফকির বলেন, এটা কে গাছ কাঁটা বলে না। বিদ্যুৎ বিভাগ নিয়মিতই গাছ দুটো ছেঁটে দিচ্ছিল। বাকি শুধু কাণ্ড ছিল। তাছাড়া আরবারি কালচারের লোক এসেছিল বলে জানান অধ্যাপক রেজাউল করিম।
আরবারি কালচার ইনস্টিটিউটের ভাষা মঞ্চের নিকটের কড়ই গাছ কাঁটতে বলেছে এছাড়াও বৈদ্যুতিক খুঁটির চারপাশে কিছু গাছের ডাল ছাটাই করতে বলেছে এবং তারা (আরবারি কালচার) আমাদের চিঠি দিতে বলেছে, বলে জানান অধ্যাপক রেজাউল করিম ফকির।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবরি কালচার সেন্টারের পরিচালক ও উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন গাছ কাটতে গেলে আরবরি কালচার সেন্টারকে চিঠি দিতে হয় ৷ পরবর্তীতে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি ৷ কিন্তু আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে আরবরি কালচার সেন্টারে এ ধরনের কোনো চিঠি আসেনি ৷
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট গাছ কাটাটি বিশবিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুসারে কাটা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মিহির লাল সাহা বলেন, যেহেতু গাছ কাটার বিষয়ে আমাদের অবহিত করা হয়নি, কোন চিঠি আসেনি ৷ তাই বলা যায় গাছ কাটার কাজটিতে নিয়ম মানা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) এবং বৃক্ষায়ণ ও সৌন্দর্যবর্ধন কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ সামাদ৷ তিনি বলেন, গাড়ি রাখার জায়গা কীভাবে করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা যেত ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে গাছ কাটা ঠিক হয়নি ৷ আরবরি কালচার সেন্টারের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে আমরা খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব ৷