ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ওই হলের ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মো. শিপন মিয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
রোববার (২৪ জুলাই) এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীর নাম ইয়াসির আরাফাত প্লাবন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত আরেকজনের নাম মো. ইয়াসিন। অভিযুক্তরা সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদারের অনুসারী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শিপন মিয়া বলেন, পরীক্ষা থাকার কারণে আমি গত ২৩ জুলাই সন্ধ্যার প্রোগ্রামে যেতে পারিনি। এজন্য সিনিয়ররা আমাকে ডেকে তাদের রুমে নেন। রুমে যাওয়ার সময় আরেক সিনিয়র আমাকে ফোন দেন। ওনার সঙ্গে কথা বলার সময়ই অন্যরা আমার ফোন নিয়ে নেয়।
তিনি আরও বলেন, রুমে ঢুকার পর প্লাবন ভাই আমার শার্টের কলারে ধরে চড়-থাপ্পড় মারেন। ইয়াসিন ভাই আমার ফোন আটকে রেখে বলেন, তোর ফোন ব্যবহার করার দরকার নেই। পরে তাদের রুম থেকে বেরিয়ে আসার সময় আমাকে ফোন ফেরত দিয়ে দেয়। রুমে নিয়ে আমিসহ আমার বন্ধুদের হুমকির পাশাপাশি পরিবার নিয়ে গালমন্দ করেন তারা। এক পর্যায়ে মাথা ঘোরা শুরু করলে আমি বললাম, ভাই আমার কালকে পরীক্ষা আছে। তখন ইয়াসির বলেন পরীক্ষা শেষ কর এরপর প্রতিদিন ১১৭ নম্বর রুমে আসবি। পরীক্ষা শেষ হলে তোরে হল থেকে বের করে দিবো।
এদিকে শিপন মিয়াসহ প্রায় আটজনকে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীর বলেন, হল ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদারের নির্দেশে আজকে আমাদের সবাইকে গেস্টরুমে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। যারা আসতে দেরি করেছে কিংবা পরীক্ষার কারণে আসতে পারেনি, তাদের ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে আবারও ডেকে নিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। আমরা এতে বিচলিত হয়ে পড়েছি।
অভিযুক্ত ইয়াসির আরাফাত প্লাবন নির্যাতনের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন, এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কেউ বলছে। আমি হলের বাইরে ছিলাম। আমি এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদার বলেন, আমি অসুস্থ। হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। হলে এ রকম একটি ঘটনা শুনেছি। যদি এ রকম কেউ করে থাকে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।
কর্মসূচিতে না যাওয়ায় শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, এ ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে। এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীর জড়িত থাকার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের মর্যাদা রক্ষা ও তাদের সহযোগিতা করাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাজ। এর বাইরে কোনো কর্মকাণ্ড করে থাকলে, তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই নিতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।