শামসুজ্জামানের মুক্তির দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জাবি শিক্ষার্থীদের অবরোধ, দীর্ঘ যানজট

, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 16:49:32

প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তিসহ ৩ দফা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকেল পৌনে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে (ডেইরি গেইট) শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে। এ অবরোধ শেষ হয় বিকেল ৩টা বেজে ৪০ মিনিটে।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তি, শামস ও সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।

এদিকে অবরোধ চলাকালে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। তবে এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অসুস্থ রোগী পরিবহন করা অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে ছেড়ে দেন।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৪৭ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘শামস ভাই দিনমজুরের বরাতে যে কথা লিখেছেন, তা এদেশের কোটি কোটি মানুষের মনের কথা। সত্য বললে গলা টিপে ধরার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। গণতন্ত্রের যে বুলি আওরানো হয় কোথায় সেই মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা? ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে মুখ চেপে ধরার সাহস করলে আবার একটি গণঅভ্যুত্থান দেখবে এই দেশ। অনতিবিলম্বে শামস ভাইকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে, নয়তো জাহাঙ্গীরনগরের এই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে।’


অবরোধ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত দে বলেন, ‘শামসের প্রতিবেদনে মানুষের চাল-ডাল ভাত-মাংসের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর সাধারণ মানুষের সাথে চলমান এই সঠিক চিত্র তুলে ধরার জন্য তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই হচ্ছে বাংলাদেশের আইন, রাষ্ট্রব্যবস্থা আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। বাংলাদেশে যে শুধু খেটে খাওয়া মানুষরাই কষ্টে আছে বিষয়টি তা নয়। আজকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাও কষ্টে আছে।’

এছাড়া শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মহাসড়ক অবরোধকালে ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখার সভাপতি জহির ফয়সাল তার বক্ত্যব্যে বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে একটি রিপোর্ট করার অপরাধে শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা বলতে চাই, দেশে আইয়ুব খানের শাসন চলছে নাকি? ইয়াহিয়া খানের শাসন চলছে নাকি? যদি তাই না হয়, তবে কেন একজন সাংবাদিককে স্বাধীনতা দিবসে রিপোর্ট করার জন্য তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অনতিবিলম্বে শামসুজ্জামানের মুক্তি চাই।’

অবরোধ কর্মসূচিতে সমাপনী বক্তব্যে ৪৭ ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তাপসী প্রাপ্তি দে বলেন, ‘একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের চিত্র একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। আর সেই প্রতিবেদনের দায়ে একজন সাংবাদিককে তার বাসা থেকে রাতের আধারে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বারবার অস্বীকার করেন। রাষ্ট্রদোহী অপরাধ হলে কেন তারা তাকে সঠিক পন্থায় নিয়ে গেলো না? এই প্রশ্নটি এখন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাকে আটকের পর রাষ্ট্র, সরকার, সিআইডি, পুলিশ সবাই আমাদের সাথে নাটক করেছে। তারা জানেনা শামস কোথায় আছেন। অথচ আমরা দেখেছি পরবর্তীতে শামস ভাইকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে আনা হয়েছে।’

এসময় পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রাপ্তি বলেন, ‘আগামী রবিবার কোর্ট টাইম পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। এই সময়ের পর শামস ভাইকে মুক্তি না দেয়া হলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাবো।’

অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে মহাসড়কের দুই পাশে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিলেও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। প্রায় এক ঘণ্টার মতো অবরোধ কর্মসূচি পালন শেষে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যান।

এদিকে শিক্ষার্থীদের অবরোধে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অচল হয়ে পড়ে। ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। প্রায় আধা ঘণ্টা পর যাত্রীদের দূর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর