দেশে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন শনাক্তের সংখ্যার পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এ অবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস এবং নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানি জমে রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। যা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে মশার লার্ভা। অপরিচ্ছন্ন এসব ড্রেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করলেও সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তেমন কোন উদ্যোগ নেয়নি এখনো।
শিক্ষার্থীদের দাবি প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা, উদাসীনতার কারণে অপরিচ্ছন্ন তাদের ক্যাম্পাস।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রধান ফটকে প্রবেশের ডান পাশের ড্রেন পরিপূর্ণ হয়ে আছে পলিথিন, কাগজ, কাপড়ের টুকরো আর প্লাস্টিক সামগ্রী দিয়ে। দ্বিতীয় ফটকের পাশে বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট ও ময়লা-আবর্জনে স্তূপাকারে ফেলে রাখা হয়েছে এবং নতুন একাডেমিক ভবনের পাশ থেকে দ্বিতীয় ফটক ও ছাত্রী কমনরুমের পেছন পর্যন্ত ড্রেনের মধ্যে বোতল, প্লাস্টিক সামগ্রী, জুসের গ্লাস আর পলিথিন স্তূপাকারে পড়ে আছে। ছাত্রী কমনরুমের পেছনের দিকে ময়লা পানিযুক্ত ড্রেনের দুই পাশেই উচ্ছিষ্ট জিনিসপত্র পড়ে আছে ৷ যেটি দেখলে ময়লা ফেলার স্থান মনে হয়। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ চত্বরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান-অর্থনীতি বিভাগের বিল্ডিংয়ের সামনে থাকা ড্রেনে পড়ে আছে ময়লার বিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যান্টিনের বিপরীত পাশে থাকা বেসিনের পানি যাওয়ার জন্য যে ড্রেন রয়েছে সেটি ভরাট হয়ে আছে ময়লা পানিতে। দীর্ঘদিন ধরে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় এখানেও ময়লা পানি জমে বুদবুদ তৈরি হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের পাশে ও পেছনে থাকা ড্রেনগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। ড্রেনগুলোতে শ্যাওলার পাশাপাশি জন্মেছে আগাছা। বিজ্ঞান ভবনের পেছনে ও শিক্ষক ডরমিটরির পাশে থাকা ড্রেনগুলোতে ময়লা আর পানি একত্রে মিশে পানি কালো রঙ ধারণ করেছে। ভন ভন করে মশা উড়ছে সেই ড্রেনে ৷ গণিত বিভাগের সামনের ড্রেনও ময়লায় পরিপূর্ণ।
জানা যায়, ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামগ্রিক পরিবেশ উন্নয়ন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার জন্য পরিচ্ছন্নতা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেনগুলো প্রাথমিকভাবে পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিলেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকেনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা কমিটির আহবায়ক এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল কাদের বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ইতিমধ্যেই নতুন ভবনের ছাদ পরিষ্কার করা হয়েছে। ডরমিটরির সামনের ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। বাকি ড্রেনগুলোও পরিষ্কার করা হবে পর্যায়ক্রমে।
পরিচ্ছন্নতা কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (এস্টেট) মোহাম্মদ কামাল হোসেন সরকার বলেন, সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ক্যাম্পাসে মশার লার্ভার ঔষধ দিচ্ছি এবং ধোঁয়া স্প্রে করছি। এছাড়াও ক্যাম্পাস পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনের বেলায় ক্যাম্পাসে মশার কামড়ে বসা যায় না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মশার উপদ্রবে ক্যাম্পাসের শান্ত চত্বর, গুচ্ছ ভাস্কর্য, বটতলা, কাঁঠাল তলা, মুজিব মঞ্চসহ সকল স্থানেই বসার আর কোন পরিবেশ থাকে না। তাই ডেঙ্গু আতঙ্কে সন্ধ্যার আগে সবাই ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর রহমান বলেন, আমরা ক্লাস শেষে বন্ধুরা মিলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বসে গ্রুপ স্টাডি এবং আড্ডা দিয়ে থাকি। কিন্ত অপরিচ্ছন্নতার কারণে ক্যাম্পাসে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় তা ব্যাহত হচ্ছে। ডেঙ্গু আতঙ্কে যত দ্রুত সম্ভব সবাই ক্যাম্পাস ত্যাগ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, কয়েকদিন আগেই দেখেছি ক্যাম্পাসে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান হয়েছে। অথচ ক্যাম্পাসে বেশিরভাগ অংশ এখনো ময়লা-আবর্জনার স্তুপ জমে আছে। ক্যাম্পাস পুরোপুরি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করে ঢালাওভাবে এমন প্রচার-প্রচারণা করে লাভ কি। প্রত্যেকটা ড্রেনে পানি জমে আছে যা থেকে এডিস মশা উৎপন্ন হবে এবং আমাদের ডেঙ্গু আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করছি দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী বেলাল হোসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এমন হতে পারেনা। ড্রেনগুলো ময়লায় আবদ্ধ। এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে। সে সময় ড্রেনগুলোতে মশার উপদ্রব সৃষ্টি হচ্ছে। ক্যাম্পাসে আবার ময়লার স্তূপও দেখা যায়। এগুলো পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব পরিচ্ছন্নতা কমিটির। প্রকৌশল দফতর থেকেও কয়েকটি ড্রেন পরিষ্কার রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।