শরতের শেষে হেমন্ত বরণকে যেন রাঙিয়ে তুলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সাহিত্য সংসদের আয়োজনে ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পৃষ্ঠপোষকতায় প্রাণের মিলনমেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য উৎসব ২০২৩।
১৬ ও ১৭ অক্টোবর দুই দিনব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) আয়োজিত এই উৎসব যেন হয়ে উঠেছে সাহিত্য, সাহিত্যিক আর পাঠকদের মিলনমেলা। চলছে সমকালীন সাহিত্যের নানাবিধ দিক নিয়ে আলোচনা, বইমেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
গল্প, প্রবন্ধ, ইতিহাস, সমাজ, রাজনীতি, কবিতা, অনুবাদ, বিজ্ঞান, ধর্ম, দর্শন, নাট্য নিয়ে এ উৎসবে সোমবার (১৬ অক্টোবর) দিনভরই ছিল নানান ধরনের আলোচনা। যেখানে অংশ নেন দেশের খ্যাতনামা সাহিত্যিকরা। লেখালেখি ও সম্পাদনা বিষয়ক কর্মশালা ও প্রশিক্ষক শীর্ষক আলোচনা করেন রাখাল রাহা, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ : আজকের পরিপ্রেক্ষিত; এতে আলোচক হিসেবে ছিলেন ড. অজয় দাশগুপ্ত ও মোস্তফা হোসেন, 'সাম্প্রতিক বাংলা গোয়েন্দা গল্প ও থ্রিলারের সুলুকসন্ধান' শীর্ষক সেমিনারে আলোচক ছিলেন মোশতাক আহমেদ ও অরুণ কুমার বিশ্বাস, 'বাংলাদেশের অনুবাদ সাহিত্যে শৃঙ্খল ও নৈরাজ্য' শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক আব্দুস সেলিম, ড. খালিকুজ্জামান ইলিয়াস ও অনুবাদক জাভেদ হুসেন, 'শিল্পের উদ্যোক্তা, উদ্যোক্তার শিল্প' শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনওয়ার শফিক,আতাউর রহমান খান আকির, জাহিদুল ইসলাম রনী, ড. জে আলী ও নাজমুল হুদা।
আজ মঙ্গলবারও (১৭ অক্টোবর) এ আয়োজনে দিনব্যাপী থাকবে সাহিত্যের বিভিন্ন অঙ্গনের ছোঁয়া। পহেলা হেমন্তের এ সকাল আরম্ভ হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের মাধ্যমে। ক্রমান্বয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কবিতাচর্চা: সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবেন টোকন ঠাকুর, বায়তুল্লাহ কাদেরী, আখতারুজ্জামান আজাদ, সামতান রহমান।
দুপুরে হবে সাহিত্য পাঠের রীতি ও অসাম্প্রদায়িক নজরুলের মাজারে সাম্প্রদায়িকতার ফুল শীর্ষক আলোচনা করা হবে। এতে আলোচক হিসেবে থাকবেন খিলখিল কাজী, মজিদ মাহমুদ। মান কথ্যবাংলা ও আমাদের সাহিত্যের ভাষা শীর্ষক আলোচনায় থাকবেন আলোচক ফয়েজ আলম, নজীর আহমদ সিমাব
বিকালে ‘জনপ্রিয় সাহিত্য, সাহিত্যের জনপ্রিয়তা শীর্ষক আলোচনা করবেন, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মনি হায়দার, সাদাত হোসাইন,পলাশ মজুমদার। বাংলার নাট্য ঐতিহ্য শীর্ষক আলোচনা করবেন ড. রতন সিদ্দিকী, আবু সাঈদ তুলু, তানভীর নাহিদ খান, নিঝুম শাহ।
দিনশেষে পহেলা হেমন্তের এ গোধুলিতে আয়োজন করা হবে সাংস্কৃতিক পর্ব ও সমাপনী অনুষ্ঠান।
সোমবার 'বাংলাদেশের সাহিত্য-সমাজ ও ভাষার রাজনীতি' শীর্ষক আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম বলেন, বাংলা সাহিত্য নিয়ে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। সত্তর, আশি ও নব্বইয়ের তুলনায় আমার বিবেচনায় গত বিশ বছরে বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় অন্তত সৃজনশীল চর্চা, সাহিত্য সমাজে গভীরতর রাজনৈতিক এবং তাত্ত্বিক সচেতনতা অন্তত উল্লেখযোগ্য। সাহিত্যে আমরা সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতির গভীর মেলবন্ধন দেখতে পাই। কিছু সময়ে এ মেলবন্ধন স্পষ্ট হয় যেমন আমাদের এখানে পঞ্চাশের দশকে ও ষাটের দশকের শেষে সাহিত্যের ধরন পরিবর্তন হয়ে যায়। ভাষা ও সাহিত্যের মধ্যে রাজনৈতিক চর্চা এসময় অত্যন্ত স্পষ্ট হয়। আমার আশার জায়গা এই গত বিশ বছরে কবিতায় একদম গভীরতর রাজনৈতিক অর্থে কবিতায় দূর্দান্ত পরিবর্তন ঘটেছে। ভাষা, অন্তর্নিহত তৎপরতা, সত্য অনুসন্ধান ও প্রস্তাবনা এবং বহুমাত্রিকতার দিক থেকে এই সময়ের আমি বাংলা কবিতার প্রশংসা করার মতো অনেক দিক দেখতে পাই।
সাহিত্য উৎসবের আয়োজকদের অন্যতম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক আমানউল্লাহ রিয়াজ বলেন, একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্র ছিল কিন্তু এখন সময়ের প্রেক্ষাপটে এ স্থানটা সংকুচিত হয়ে গেছে, সাহিত্যের ধারা, যে মূল্যমান তা হ্রাস পেয়েছে। আমরা চেয়েছি এ উৎসবের মাধ্যমে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে।
তিনি আরো বলেন, বিচিত্র রকমের প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা, প্রতিশ্রুতিহীনতা ও আর্থিক সংকটের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও কিছু তরুণের প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি ও নিরলস পরিশ্রমের ফলে সম্ভব হয়েছে এ আয়োজন।
উল্লেখ্য, পাঠকদের জন্য সাহিত্য উৎসবে বিশেষ আয়োজন হিসেবে রয়েছে ‘বইমেলা'। যেখানে অংশ নিয়েছে অনিন্দ্য, জ্ঞানকোষ, আফসার, মাওলা ব্রাদার্স, তাম্রলিপি, অন্যধারা, কথাপ্রকাশসহ ২১টি প্রকাশনী।