স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের তিন মাসের ব্যবধানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সকল প্রকার নিয়োগের ওপর আবারও স্থগিতাদেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব মোছা. রোখসানা বেগম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই আদেশ জারি করা হয়।
এছাড়া একইদিনে রোখসানা বেগম স্বাক্ষরিত পৃথক এক চিঠিতে রিট পিটিশনের তথ্য গোপন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন নিয়োগ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেছিল তার ব্যাখ্যা জরুরি ভিত্তিতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
স্থগিতাদেশের চিঠিতে বলা হয়েছে, তৎকালীন (২০২০ সালে) উপাচার্যের সময় নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে এ বিভাগ (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ) কর্তৃক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ স্থগিতাদেশ জারি করা হয়। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে উক্ত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় যে, উক্ত নিয়োগ অনিয়মের বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে ৭১২৩/২১ নং রিট পিটিশন মামলা চলমান আছে। এমতাবস্থায়, বর্ণিত রিট পিটিশন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জারিকৃত প্রত্যাহার আদেশ স্থগিত করা হলো এবং উক্ত রিট পিটিশনটি নিষ্পত্তির যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
অন্যদিকে ব্যাখ্যা প্রদানের চিঠিতে প্রথমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর নিয়োগ স্থগিতাদেশের (১নং স্মারক) ও চলতি বছরের ২৫ জুলাই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের (৩নং স্মারক) এবং গত বছরের ১২ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আবেদনের স্মারক (২নং স্মারক) উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব স্মারক উল্লেখ করে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সূত্রস্থ ১ নং স্মারকে তৎকালীন উপাচার্যের সময় নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে এ বিভাগ কর্তৃক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ স্থগিতাদেশ জারী করা হয়। সূত্রোস্থ ২ নং স্মারকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে উক্ত স্থগিতাদেশ সূত্রোন্থ ৩ নং স্মারকে প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় যে, উক্ত নিয়োগ অনিয়মের বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে ৭১২৩/২১ নং রিট পিটিশন মামলা চলমান আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২ নং স্মারকে প্রেরিত আবেদন পত্রে উক্ত বিচারাধীন রিট পিটিশনের তথ্য গোপন করেছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।
'এমতাবস্থায়, বর্ণিত ৭১২৩/২১ নং রিট পিটিশনের তথ্য গোপন করে সুত্রোস্থ ২ নং স্মারকের মাধ্যমে কেন নিয়োগ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছিল তার ব্যাখ্যা জরুরি ভিত্তিতে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।'
এদিকে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা একটি চিঠি পেয়েছি। এতে নিয়োগে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, সেটি স্থগিত করা হয়েছে। নিয়োগ নিয়ে একটি রিট করা হয়েছিল। আমাদের তথ্যে একটু ঘাটতি ছিল। এটি মীমাংসা হলে ফের স্থগিতাদেশ উঠে যাবে।
এর আগে, ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে তৎকালীন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান এবং প্রো-ভিসি অধ্যাপক চৌধুরী জাকারিয়ার দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় রাবির সব ধরনের নিয়োগ স্থগিত করে। পরে চলতি বছরের ২৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে রাবি কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।