রাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাহাড়ে সেনা শাসন প্রত্যাহারের দাবি

, ক্যাম্পাস

রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-18 17:22:16

পাহাড়ে সেনা শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে পাহাড়ি ছাত্রপরিষদের সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা, বর্তমান সহ-সভাপতি সুনিল ত্রিপুরাসহ চারজনকে হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই দাবি জানানো হয়।

এ সময় 'পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ কর', 'পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ কর', 'পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ কর', 'পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ কর', 'পানছড়িতে ৪ হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কর', 'পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা শাসন তুলে নাও'সহ বিভিন্ন দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানানো হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সরকার পাহাড়ের স্বপ্ন ও নেতৃত্বকে দমন করার চেষ্টা করছে। গত ১১ ডিসেম্বরের ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটা খুবই পরিকল্পিত এবং সংঘবদ্ধভাবে সংঘটিত অপরাধ। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এরকম অপরাধ সংঘটিত হওয়া সম্ভব না। পাহাড় থেকে সেনা শাসন প্রত্যাহার করতে হবে। শান্তিচুক্তির দফাগুলো প্রত্যেকটা সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি, পাহাড়িদের স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে। পাহাড় থেকে অনুপ্রবেশকারীদের সরিয়ে ফেলতে হবে। 

মানববন্ধনে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক একেএম মাসুদ রেজা ওরফে সৌভিক রেজা বলেন, '১৯৯৭ সালে পাহাড়ের শান্তি চুক্তি হওয়ার পরে শন্তু লারমার জনসংহতি সংঘ কার্যত নিষ্ক্রিয়। ১৯৯৮ সালে ইউপিডিএফের জন্ম। ইউপিডিএফের দাবি হলো পাহাড়ে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া। খুবই ন্যায্য দাবি। তারা শান্তি চুক্তির বাস্তবায়নও চেয়েছিল। কিন্তু দেখবেন, শন্তু লারমা ঈদের খুতবার মত শান্তি চুক্তির দিবস আসলেই বছরে একবার কান্নাকাটি করে বলেন যে, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হলোনা। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করেননা। খেয়াল করবেন, লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছে যারা, তাদের প্রতি কিন্তু এই সরকারের প্রথম থেকেই একটা বিদ্বেষমূলক দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। এটাতে তথাকথিত ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধের নাম দিয়ে এই কাজগুলো তারাই মদদ দিয়ে যাচ্ছে।' 

তিনি বলেন, 'আমরা পাহাড়ে ন্যায্য অধিকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানায়। আমরাও মনে করি, পাহাড় থেকে সেনা শাসন প্রত্যাহার করতে হবে। শান্তিচুক্তির দফাগুলো প্রত্যেকটা সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি, পাহাড়িদের স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে। পাহাড় থেকে অনুপ্রবেশকারীদের সরিয়ে ফেলতে হবে।'

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজি মামুন হায়দার রানা বলেন, 'পাহাড় নিয়ে আমাদের যেমন আতঙ্ক তৈরি করা হয়, আবার একই পাহাড়ে রিসোর্ট বানিয়ে অনেক কিছু করা হয়। কোটি কোটি টাকা আনা হয় ইকোলজি ঠিক করার নামে। আবার পাহাড় কেটে রিসোর্ট বানিয়ে সেখানে লাখ লাখ মানুষকে নিয়ে গিয়ে সেগুলোকে (পাহাড়গুলোকে) নষ্ট করা হয়। রাষ্ট্রযন্ত্র প্রত্যেকদিন সেগুলোকে মদদ দিয়ে যাচ্ছে। তারই বিরুদ্ধে যে মানুষগুলো বিভিন্ন সময়ে দাঁড়িয়েছিল, স্বায়ত্তশাসনের কথা বলেছিল, তাদের মধ্য থেকে চারজনকে গত ১১ ডিসেম্বর হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে। সেই হত্যার বিচার এখানে দাড়িয়ে চেয়ে কোনো লাভ আছে কিনা আমি জানিনা। কিন্তু বিচার চাওয়া অব্যাহত রাখতে হবে। পাহাড়ে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে।'

মানববন্ধনে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ারের আলিফের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য ও দেন ইতিহাস বিভাগের সহকারি অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার সুজন, নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজি শুসমিন আফসানা, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেহেদী হাসান, রাবি শাখা ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম আহমেদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পক্ষে শামিম ত্রিপুরা, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ, ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক রায়হান আলী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে শামিম ত্রিপুরা। এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে, গত বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতিসহ ৪ জনকে হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করেছিল ক্যাম্পাসের প্রগতিশীল বাম ছাত্র সংগঠন এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সদস্যরা।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) চার নেতাকর্মী হত্যার শিকার হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর