নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের সপ্তদশ প্রয়াণ দিবস পালিত

বিবিধ, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-01-14 20:35:06

বাংলা নাটকে নতুন ধারার প্রবর্তক নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ১৭তম প্রয়াণ দিবস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের আয়োজনে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচিতে পালিত হয়েছে।

রোববার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ।

উদ্বোধন শেষে পুরাতন কলা ভবনের সম্মুখ থেকে একটি স্মরণযাত্রা শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীনের সমাধি প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। এসময় তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম জানান, সেলিম আল দিনের প্রয়াণ দিবসে এসে আমার যে জিনিসটি ভালো লাগে তা হল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগ উনিই তৈরি করেছিলেন নিজস্ব কারণে। উনি যে নাট্যধারা এবং রীতি তৈরি করেছিলেন সেটাকে ধরেই নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ আজকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যতদিন থাকবে, নাট্যতত্ত্ব বিভাগ যতদিন থাকবে পরম্পরায় সেলিম আল দিনের এই প্রয়াণ দিবস হতেই থাকবে। যদি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থাকে তাহলে ১০০ বছর, ২০০ বছর পরেও সেলিম আল দিনের নাম উচ্চারণ হবে।

আফসার আহমেদ থিয়টার ল্যাবে সেলিম আল দীন আলাপন পর্বে আলোচনা করেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ, অধ্যাপক লুৎফর, অধ্যাপক রশীদ হারুন।পরবর্তীতে পুরাতন কলা ভবন সংলগ্ন মৃৎমঞ্চে সেলিম আল দীন রচিত মঞ্চনাট্যের স্থিরচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, সেলিম আল দীনের স্মরণে গান ও নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নূর-ই-নাজনীনের নির্দেশনায় সেলিম আল দীন রচিত নাটক নিমজ্জন মঞ্চায়িত হয়।

সবশেষে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ১৭তম প্রয়াণ দিবস উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক ড. সোমা মুমতাজের সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে এবারের আয়োজন।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার সেনেরখিলে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার সৃষ্টিশীলতার কিরণচ্ছটা ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

কর্মক্ষেত্র হিসেবে শিক্ষকতাকে বেছে নিয়ে ১৯৭৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। এরপর থেকেই তার কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত হতে থাকে।

১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উদ্যোগেই খোলা হয় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এই বিভাগকে তিনি অধিষ্ঠিত করেন মর্যাদার আসনে। শিক্ষকতার পাশাপাশি ১৯৮১-৮২ সালে দেশব্যাপী নাট্য আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। এর আগে তার শিল্পসঙ্গী নাট্যনির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন।

তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্যও ছিলেন তিনি। সেলিম আল দীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৬ সালে জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার এবং ২০০৭ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় তাকে।

নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি মাত্র ৫৯ বছরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় মসজিদের কাছে তাকে সমাহিত করা হয়।

বাংলা নাটকের নতুন ধারার এ প্রবর্তক তার নাটকে তুলে ধরেছেন বাঙালির নিজস্ব জীবনচেতনা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তথা গ্রামীণ মানুষের জীবন ও সমাজবাস্তবতা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর