ধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল জাবি ক্যাম্পাস, বিচারের দাবিতে শিক্ষকরা

, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-02-07 18:23:16

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণের মতো জঘন্যতম ঘটনার সাথে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট সদস্যবৃন্দ।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট সদস্যবৃন্দ। এসময় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাবেক উপাচার্য ড. শরীফ এনামুল কবির সহ অন্যান্য রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট সিনেট সদস্যবৃন্দ।

ড. শামসুল আলম সেলিম বলেন, আজ আমরা বিভিন্ন দলমতের সবাই একত্রিত হয়েছি। সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে যারা অপকর্ম করে, তাদের বিতাড়িত করতে হবে। আমরা চাই, নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হোক। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তাকে এখনো বহিষ্কার করা হয়নি। এমনকী সাময়িকভাবে বরখাস্তও করা হয়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমি দাবি জানাচ্ছি, সিন্ডিকেটে যে দাবিগুলো তোলা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করুন।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটর সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, সারা পৃথিবী জুড়ে যে নিন্দার বহর বইছে, সেটাকে বন্ধ করতে চাই এবং এজন্য আমি এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। আমি জানি কীভাবে ছেলেমেয়েদের আদর-সোহাগের মধ্যেমেও শাসনে রাখতে হয়। কিন্তু আপনারা শুধু আদর দিয়ে রাখবেন, সেটা আমরা চাই না। এই নিপীড়নের পক্ষে যারা দাঁড়িয়েছেন, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।

ড. শরীফ এনামুল কবির বলেন, আমরা আজ এখানে ধর্ষণ ও গণরুমের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করতে এসেছি। আমরা চাই, যারা ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ফাঁসি দেওয়া হোক। হলে ২৫০০ নয়, খুঁজে দেখেন পাঁচ হাজার ছাত্র হলে অবস্থান করছে। অছাত্ররা হলে অবস্থান করে আর বৈধ শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবন-যাপন করে। অবিলম্বে হল থেকে গণরুম উচ্ছেদ করতে হবে। হলের প্রাধ্যক্ষ, ওয়ার্ডেনদের হলে থাকতে হবে। হলের ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে।  

তিনি আরো বলেন, 'আপনি আমাদের (সিনেটর) ভোটে নির্বাচিত উপাচার্য। আপনি কেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ভয় পান। আমরা আপনার সাথে আছি। আপনি মনে রাখবেন, পাঁচদিন মানে 'পাঁচদিন'। এরপরে যেন একজন অছাত্র, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, বহিরাগত যেন আবাসিক হলে স্থান না পায়। ২১টা হলের প্রভোস্ট একসঙ্গে যদি তাদের হলে অভিযান পরিচালনা করেন, তাহলে কোনো অবৈধ শিক্ষার্থীর সাহস নেই তাদের সামনে দাঁড়ানোর।'

এসময় সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটেডদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন মেহেদী জামিল, ইন্দু প্রভা দাস, সাবিনা ইয়াসমিন, সোহেল পারভেজ।

এদিকে, নিরাপদ বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিতের দাবিতে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’র ব্যানারে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। 

মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহেদ রানার সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগের একাধিক শিক্ষক বক্তব্য রাখেন।

মানববন্ধনে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. হাসিবুর রহমান বলেন, এই ক্যাম্পাস আমাদের বাসস্থান। এখানে যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই৷ আজকে এখানে যে জনমত তৈরি হয়েছে, সেটি যদি একটি ঘটনার বিচারের দাবির মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায়, তাহলে এই সমবেত হওয়ার আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে৷ ধর্ষক কিন্তু একদিনে তৈরি হয় না, একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একজন ধর্ষক তৈরি হয়। 

ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুলতানা আক্তার বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় আমরা লজ্জিত! সেদিন শুধু সেই নারী নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ধর্ষিত হয়েছে। আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আমি মনে করি, গণরুম সংস্কৃতি এর জন্য দায়ী। গণরুম না থাকলে রাজনীতি হবে না। তাই, তারা গণরুম তৈরি করে। গণরুম থেকে সন্ত্রাসী বানায়। শিক্ষকদের হলে সিট বণ্টনের দায়িত্ব নিতে হবে। ধর্ষক এবং তার সাথে যুক্ত সবার সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি। মুখোশধারী শিক্ষক ও ছাত্রদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সুষ্ঠু বিচার না হলে আমরা শিক্ষকরা গণপদত্যাগ করবো।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, ধর্ষণের মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেই জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। শাস্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে। ফের তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। তদন্ত কমিটিতে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল থেকে একজন, অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজনকে কমিটিতে যুক্ত করতে হবে। যৌন নিপীড়নে যুক্ত শিক্ষকদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। চাকরি চ্যুত করতে হবে।

বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোছা. আমিনা খাতুন বলেন, 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবাদ করতে জানে! অধিকার ছিনিয়ে আনতে জানে! আমি চাই, ধর্ষকের যৌনদণ্ড ছিন্ন করা হোক। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরবর্তন করতে হবে। ধর্ষিতার দিকে আঙুল না তুলে ধর্ষকের দিকে আঙুল তুলতে হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত বিচার হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা মাঠ ছাড়বো না।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ধর্ষক ও তার সহযোগীদের রিমান্ডে নেওয়ায় আমরা সাধুবাদ জানাই।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ আবাসিক হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে কৌশলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুনুর রশীদ মামুন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর