অসংখ্য নিপীড়নের ঘটনাকে উসকে দিচ্ছেন জাবির প্রক্টর: পারভীন জলি

, ক্যাম্পাস

জাবি প্রতিনিধি, বার্তা২৪.কম | 2024-02-12 14:11:11

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ৫ দফা দাবিতে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’-র অবরোধ কর্মসূচিতে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নিজেও নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত। অসংখ্য নিপীড়নের ঘটনাকে তিনি উসকে দিচ্ছেন’ বলে মন্তব্য করেছেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’-এর ব্যানারে সকাল পৌনে ৯টায় প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে এ সব কথা বলেন তিনি।

অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, উপাচার্য রোববার বলেছেন, আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি অছাত্রদের বের করার। তিনি যদি আপ্রাণ চেষ্টা করেই থাকেন, তাহলে এই পাঁচদিনে অন্তত পাঁচশত শিক্ষার্থী বের করার কথা। যদি সেটা না পারেন, তাহলে তিনি কোন নৈতিকতার বলে তার পদে আছেন, সেই প্রশ্নটি করতে চাই।

তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গত কয়েক বছর ধরে ঘুরে ঘুরে পদে আসছেন। আমরা জানি না, তার মধ্যে বিশেষ কী গুণ রয়েছে! কোনো বিশেষ গুণ তো দেখতে পাই না! তিনি নিজেও নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত! অসংখ্য নিপীড়নের ঘটনাকে উসকে দিচ্ছেন তিনি। তাকে বারবার ক্ষমতায় বসিয়ে কী বোঝাতে চান, আমরা বুঝি না।

অবরোধ কর্মসূচিতে আ র ক রাসেলের সঞ্চালনায় ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’-র সদস্যসচিব পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘ তার বক্তব্যে বলেন, আমরা ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য এখানে এসে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। এই প্রশাসন আমাদেরকে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, আজকে যে গুটিকয়েক মানুষ এখানে দাঁড়িয়েছি, শুধু তারাই আন্দোলনকারী নয় বরং প্রত্যেকটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিধি হিসেবে হাজির হয়েছি আমরা।

ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের কোনো বাস্তবায়ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করতে পারেনি। অছাত্রদের বের তো দূরে থাক বরং প্রশাসন তাদের নিয়ে ভাগবাটোয়ারার মিটিং করছে প্রতিনিয়ত।

তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে প্রতীকী অবরোধ করছি। প্রশাসন আমাদের ন্যায্য দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে আরো কঠোর কর্মসূচিতে যাবো।

বিশ্ববিদ্যালায়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য বলেছিলেন, ৫ কর্মদিবসের মধ্যে অছাত্রদের হল থেকে বের করবেন। রোববার ছিল শেষ কর্মদিবস। কিন্তু প্রশাসনের কোনো কর্মতৎপরতা আমরা দেখিনি। আমরা চাই, প্রশাসন প্রত্যেকটি হলে প্রতিটি নিয়মিত শিক্ষার্থীকে আসন নিশ্চিত করুক। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আসন নিশ্চিত হলে স্বাভাবিকভাবেই অবৈধ ছাত্ররা অপসারিত হবে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, তার পেছনে এই প্রশাসনই দায়ী। ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানসম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। এর দায় একান্তই প্রশাসনের। র‍্যাব বলেছে, প্রশাসনের দায়! বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও বলেছে, প্রশাসনের দায়!

জাবিতে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’-র কর্মসূচি

এই আন্দোলন কোনো দলের আন্দোলন না। এই আন্দোলন একটা পবিত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আন্দোলন উল্লেখ করে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীম সুলতানা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর এখন একটি মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। আপনি কথা দিয়েছেন কিন্তু আপনি সুরাহা করতে পারেননি। প্রশাসনকে বারবার বলেছিলাম, আমরা আপনাদের সাহায্য করবো। কিন্তু আপনারা আমাদের সাহায্যে চান না। কেন চান না, তা জাতি জানে। ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক দিকটা আজ কোথাও নেই। শুধু শিক্ষার্থীরা ব্যবহৃত হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের একটাই মেসেজ দিতে চাই, ওরা তোমাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে। ওরাই তোমাদের ধর্ষক বানাচ্ছে। কোনো মা-বাবা চায় না, তার ছেলে ধর্ষক হোক!

বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে কিন্তু বিচারহীনতার ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাই, তাহলে এর সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। কিন্তু এই তদন্ত সুষ্ঠুভাবে হবে কী না, তার সংশয় রয়েছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ধিক্কার জানাই এই প্রশাসনকে! এই প্রশাসন অছাত্রদের হল থেকে বের করার জন্য এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

এদিকে, চলমান আন্দোলনের পঞ্চম দিন রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে সিন্ডিকেটের বেধে দেওয়া পাঁচদিনের মধ্যে আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করতে পারেনি। গণরুম বিলুপ্ত করে মিনি-গণরুম চালু রাখায় এক পর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

এ ছাড়া আন্দোলনকারীরা আবাসিক হলে অবস্থান করা অছাত্রদের তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্যসহ উপস্থিত প্রশাসনিক শিক্ষকরা তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং এজন্য তারা আরো দুই থেকে তিনদিন সময় চান।

এক পর্যায়ে প্রশাসনের অক্ষমতার বিষয়টি তুলে ধরে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’-র সংগঠকদের পক্ষে পারভীন জলি আগামী দুইদিন প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করেন। এ ছাড়া প্রশাসন দাবি না মানলে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রতিবাদে একদফা দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর