জাবিতে ধর্ষণ ও মাদককাণ্ডের সমাধান না হলে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধের হুমকি 

, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-02-15 15:42:31

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অভ্যন্তরে ধর্ষণ, নিপীড়ন ও মাদককাণ্ডের কোনো সমাধান না হলে আমরা আশঙ্কা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হয়তো ঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। প্রশাসন অনতিবিলম্বে এর সমাধান না করলে আমরা ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। 

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়া‌রি) সকাল ৯ টায় তৃতীয় দিনের মতো নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, অছাত্রদের আবাসিক হল থেকে বের করাসহ ৫ দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতীকী অবরোধ ও মৌন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনকালে এসব বলেন তিনি। 

এসময় ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার আরও বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঁচটি দাবি উত্থাপন করছি। কিন্তু এর সন্তোষজনক ও দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পাইনি। প্রশাসনের এ নির্লিপ্ততা চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার জন্যই আমাদের মৌন অবরোধ। আশা রাখছি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিবেকবান মানুষদের বিবেক জাগ্রত হবে।

জানার্লিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনা ইসলাম বলেন, চলমান আন্দোলনের আজ ১২ তম দিনে আমরা কালো কাপড় ধারণ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, সংস্কৃতি, গবেষেণা কার্যক্রম চলমান রেখেই আমরা আমাদের দাবি আদায় করতে চাই। আমি প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই আগামী সপ্তাহে ভর্তি পরীক্ষার জনসমাগমে হাজার হাজার মানুষের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত আছেন কিনা; প্রক্টর ও প্রশাসনিক টিম প্রস্তুত আছেন কিনা?

তিনি আরও বলেন, আমরা ধর্ষণের ঘটনার সর্বোচ্চ বিচার ও পদক্ষেপ আশা করছি। প্রশাসন যদি আমাদের সহযোগিতা চায় তাদের সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে আসব। এই প্রশাসন যদি ব্যর্থ হয়, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, প্রশাসনের কারণে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান দেশবাসীর কাছে ক্ষুন্ন হয়েছে, প্রশাসনে থাকা দায়িত্বশীল ও জড়িত সেই শিক্ষকদের অপসারণের মাধ্যমে সেই সম্মান ফিরিয়ে আনতে হবে। অছাত্রদের বের না করে বরং প্রশাসন নিয়মিত শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছে। সিন্ডিকেটের গৃহীত সিদ্ধান্ত না মেনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার অবমাননা করেছেন। আমরা আজ কালো কাপড় মুখে বেধে প্রতিবাদ করছি। দাবি না মানলে সামনে আরো কঠোর কর্মসূচিতে যাব।

নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, প্রশাসন জরুরি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। আইওয়াশের জন্য তারা যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তা বাস্তবায়িত না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে। আজকে মৌন মিছিল, আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেয়া হবে।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রসায়নের অধ্যাপক মো. এনামউল্ল্যা, গণিত বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ নজরুল ইসলাম, পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু, প্রাণরসান ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের’ উত্থাপিত পাঁচ দফা দাবিগুলো হল- ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা; মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্তপূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত ও র‍্যাগিং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা; নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তি করাসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা; নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত ও সুষ্ঠু হওয়ার স্বার্থে তদন্ত চলাকালে তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। 

এর আগে গত রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের মশাল মিছিল শেষে আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি হন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম। এসময় নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ধর্ষণ, নিপীড়ন, ও মাদককাণ্ডের বিচারের দাবিতে উত্থাপিত ৫ দফা দাবি পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রশাসনকে দায়ী করেন আন্দোলনকারীরা। পরে সেখানেই প্রশাসনিক ভবন অবরোধের ঘোষণা করেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

এরই প্রেক্ষিতে গত ১২-১৩ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছিলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরপর গতকাল বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) স্বৈরাচারী প্রতিরোধ দিবসে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, মৌন মিছিল ও শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে ধর্ষণ-মাদককাণ্ডের প্রতিবাদ জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম 'নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ'।

এ সম্পর্কিত আরও খবর