প্রবালদ্বীপ সফরে সাংবাদিকতার শিক্ষা

, ক্যাম্পাস

অনন মজুমদার, কুবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-03-03 18:44:25

বর্তমানে শিক্ষাসফরগুলো যে শুধু সফরে পরিণত হয়েছে সে ধারণা থেকে কিছুটা বেরিয়ে এসেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা (এমসিজে) বিভাগ। সম্প্রতি সেন্টমার্টিনে এক শিক্ষা সফরকে সত্যিকার অর্থে ‘শিক্ষাসফর' বানানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে।

আমাদের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের চার বছর আগে শুরুর ক্লাসগুলোতে একটা কথাই বলতেন শিক্ষকরা, দেখার চোখ থাকলেই কন্টেন্ট পাওয়া যায়। এরপর থেকেই পথেঘাটে কন্টেন্ট খুঁজে বেড়িয়েই শখ পূরণ, নাম্বারের জন্য এসাইনমেন্ট করে চার বছর পার। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এবারের ‘শিক্ষা সফর' সত্যিকার অর্থে শিক্ষার সফরে রূপ নিয়েছিল।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায়, এমসিজে'র সহযোগী সংগঠন কমিউনিকেশন ক্লাবের নেতৃত্বে প্রায় ৭৩ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা নিয়ে যাত্রা শুরু সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে৷ কক্সবাজার ইনানী জেটি হয়ে প্রায় আরো পাঁচ ঘণ্টার যাত্রা শেষে ২৭ তারিখ বেলা দেড়টায় এই প্রবাল দ্বীপে পা রাখি। এসময় জাহাজেই একটি ঘোষণা দেওয়া হয়- পুরস্কৃত করা হবে সেরা তিনটি ছবি এবং তিনটি এক মিনিটের ডিজিটাল স্টোরি।

ছোট ভাইসহ বালিকার শামুক বিক্রি। ছবি: সৌরভ সিদ্দিকী।

এ ঘোষণার পরই আমাদের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তিন দিন ও দুই রাতের এই ভ্রমণের দ্বিতীয় রাতেই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় জানিয়ে দেওয়া হবে ফলাফল। পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে অর্থ-সম্মানী।

ইতোমধ্যেই প্রায় চলমান আমাদের সবগুলো ব্যাচই অল্পবিস্তর ‘সাংবাদিকতা' কেন্দ্রিক কিছু না কিছু কোর্স শেষ করেছে৷ ফটোসাংবাদিকতা ও ডিজিটাল স্টোরি মেকিং নিয়েও আলাদা কোর্স আছে৷ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কেমন হতে পারে তা দেখতে মুখিয়ে ছিলেন আমাদের দুই শিক্ষক; বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলাম এবং শিক্ষার্থী উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান রাহাত।

কিশোরের দাঁড় টানা। ছবি: মিনহাজুল আবেদিন।

আমাদের থাকার ব্যবস্থা ছিল একেবারে সৈকতের সাথেই ‘সি ভিউ’ রিসোর্টে। ফলে সহজেই ঘুরতে আসা শিক্ষার্থীরা ছোঁয়া পাচ্ছিল সমুদ্রের। বিভিন্ন মিডিয়ায় আমরা ঢেউয়ের সাথে যে আলোকিত শৈবালের ছবি দেখেছিলাম তাও কিঞ্চিত দেখার সৌভাগ্যও হয়েছিল। তবে এর পরিমাণ ও স্থায়িত্ব এতটাই কম ছিল যে ছবিতে ধারণ করতে পারিনি।

আমাদের থেকে প্রায় ২২টি ছবি ও সাতটি ডিজিটাল স্টোরি থেকে তিনটি ছবি এবং একটি ডিজিটাল স্টোরি নির্বাচিত করা হয়। ছবি ও ভিডিও নির্বাচনের ব্যাপারে মাহমুদুল হাসান জানান, আমরা মেকি কোনো ছবি ও ভিডিও নির্বাচন করিনি। তাই একটি ভিডিওই এখানে নির্বাচিত হয়। অন্যদিকে আমাদের বিভাগে যিনি ফটোসাংবাদিকতা কোর্স করান, তার মাধ্যমেই ছবিগুলো নির্বাচিত করেছি।

মৃত কাছিম। ছবি: বার্তা২৪.কম/অনন মজুমদার।

একমাত্র ডিজিটাল স্টোরিটি ছিল সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য ও জেলেদের সংগ্রাম নিয়ে৷ বিভাগটির পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিনহাজুল আবেদিনের তৈরি।

অন্যদিকে, ছবিতে প্রথম পুরস্কার জেতে এক কিশোর মাঝির দাঁড়টানার ছবি। এর কারিগরও মিনহাজুল আবেদিন। ২য় পুরস্কার পান পঞ্চম ব্যাচেরই আরেক শিক্ষার্থী সৌরভ সিদ্দিকী। তার ছবিতে এক বালিকা শামুক বিক্রেতা তার ছোট ভাইকে নিয়ে মালা ও ব্রেসলেট বিক্রি করছে। তৃতীয় পুরস্কার পায় আমারই একটি ছবি। সমুদ্রপারে হাঁটতে গিয়ে চোখে পড়ে পঁচা ও মৃত এক কাছিমের ছবি, পাশেই প্লাস্টিকের বস্তা পড়ে আছে৷

‘এই ধরনের কার্যক্রম আনন্দের সাথে মানসিক বিকাশ ও এই ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। আমাদের ফটোসাংবাদিকতা কোর্সটি কাজে এসেছে বলেই একই ব্যাচের তিনজনই ছবি ক্যাটাগরি দখল করেছে৷ ভিডিও ক্যাটাগরিতেও দারুন কিছু স্টোরি এসেছে,' জানান বিভাগটির শিক্ষার্থী ও কমিউনিকেশন ক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক এমরান হোসেন।

বিভাগটির আরেক শিক্ষার্থী জাভেদ রায়হান বলেন, ‘এধরনের আয়োজন শিক্ষাসফরের উদ্দেশ্যকে স্বার্থক করেছে৷ সেন্টমার্টিনকে এক্সপ্লোর করা, এর সৌন্দর্য ও হুমকিগুলো বের করাটাকে একটা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তুলে আনার চেষ্টা শিক্ষার্থীদের মাঝেও এনেছে চঞ্চলতা।'

এ ধরনের আয়োজন নিয়ে বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলাম বলেন, আমরা শিক্ষা সফরকে কার্যকর করতে চেয়েছিলাম। এইজন্য বেশ কয়েকটি স্পন্সর খুঁজেছি। ডিজিটাল শপকে ধন্যবাদ ছবি ও ভিডিওর পুরস্কারের স্পন্সর করার জন্য।

শিক্ষাসফরের শেষ হয় পরদিন দুপুরেই প্রবাল দ্বীপের ছোঁয়া ও মায়া ছেড়ে যখন জাহাজে পা দেই। আবার সাড়ে চার ঘণ্টার যাত্রা। আসার সময় যে তীব্র রোদ আমাদের জাহাজে অভিবাদন জানিয়েছিল, বিদায়ের সময় সেই রোদ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। সন্ধ্যা নামে সমুদ্রের বুকে, জোর বাতাস বইতে থাকে। একই অনুভূতি এই ৭৩ জনের মধ্যেও ছিল, ছেড়ে আসতে চাই না, তবুও ছেড়ে আসি আবার ফিরবো বলে। ততদিন ভালো থাকুক, সেন্টমার্টিন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর