আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান ও প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে বলে আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। এমনকি সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকার কথাও বলা হয়েছে। তবে শিক্ষক সমিতির এই কর্মসূচি ভর্তি পরীক্ষার দিন শিথিল থাকবে।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান স্বাক্ষরে উপাচার্য বরাবর প্রেরিত এক চিঠি থেকে বিষয়টি জানা যায়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ১৩ মার্চ উপাচার্য বরাবর প্রেরিত শিক্ষক সমিতির ৭টি যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত দাবির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ বারবার মৌখিক ও লিখিতভাবে অবহিত করলেও উপাচার্য দাবিসমূহ সমাধানের কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। উপরন্তু গত ২২ এপ্রিল তারিখে দাবিসমূহ বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের স্পষ্টীকরণ, অগ্রগতি এবং করণীয় সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে অবৈধভাবে পদায়িত, বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ফৌজদারি মামলার আসামি সদস্য সহযোগে একটি কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষকদের যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত দাবিসমূহ সমাধানে প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত এ উদ্যোগ অত্যন্ত হাস্যকর হিসেবে শিক্ষকরা মতামত দেন এবং উক্ত কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন।’
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘এতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, মাননীয় উপাচার্য শিক্ষকদের অবজ্ঞা করে সমস্যা সমাধানে মোটেও আগ্রহী নন। এমতাবস্থায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষক সমিতির দাবিসমূহ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (২৪ এপ্রিলের মধ্যে) সমাধানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে চরমপত্র (আল্টিমেটাম) প্রদান করা হলো। অন্যথায় আগামী ২৫ এপ্রিল হতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন, আপনার সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির দোসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান এবং প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে প্রবেশ সংরক্ষিত থাকবে। ঘোষিত কর্মসূচি ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের দিন শিথিল থাকবে।’
এব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘গত ১২ মার্চ শিক্ষক সমিতি থেকে উপাচার্য মহোদয়ের কাছে আমাদের দাবি উপস্থাপন করা হয়। উপাচার্য দাবিগুলো পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। আমাদের শিক্ষকদের দাবিগুলো যৌক্তিক। বারবার উপাচার্যের কাছে যৌক্তিক দাবিগুলো মৌখিক ও লিখিত দুইভাবেই উপস্থাপন করা হলেও তিনি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। গতকাল দাবি বাস্তবায়নের যে কমিটি দিয়েছে এটা বিতর্কিত কমিটি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে একটি হলো আইন লঙ্ঘন করে যাদেরকে বিভাগীয় প্রধান এবং ডিন নিয়োগ করা হয়েছে তাদেরকে প্রত্যাহার করা। প্রক্টরের উপস্থিতি শিক্ষকদের উপর হামলা করা হয়েছে প্রক্টর দায় এড়াতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের যত আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে তার মূলে রয়েছে কোষাধ্যক্ষ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি আমাদের দাবিগুলো মেনে না নেয় তাহলে আমরা উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করব।’
এ ব্যাপারে প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি সব সময় শিক্ষকদের স্বার্থে কাজ করে থাকেন। শিক্ষক সমিতির দাবির সাথে প্রক্টরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার বিষয় কতটুকু যুক্তিযুক্ত সেটা আমি জানি না। শিক্ষক সমিতির এমন সিদ্ধান্ত আমি মনে করছি রাজনৈতিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি কেন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে বিষয়টা বুঝতে পারছি না। শিক্ষক সমিতির দাবির ব্যাপারে কথা বলার জন্য কাল একটি মিটিং হবে কমিটির সাথে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘আমাদের নিয়োগ রাষ্ট্রপতি দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির নিয়োগকে কেউ অবাঞ্ছিত করতে পারে কিনা সেটা তাদের বিষয়। কেউ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার কথা বলতেই পারে। তবে সেটা কতটা আইনসিদ্ধ সেটা একটা প্রশ্ন।’