হলে ভোটকেন্দ্র চায় ছাত্রলীগ, দ্বিমত অন্যদের

বিবিধ, ক্যাম্পাস

ঢাবি করেসপনডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-19 18:27:44

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে আবাসিক হলগুলোতে ভোটকেন্দ্র না রাখার বিষয়ে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য ছাত্রসংগঠনগুলো একমত। ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে করার দাবি জানায় ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সোমবার (২১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত উপাচার্য কার্যালয় সংলগ্ন আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাস রুমে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় মতবিনিময় সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদ। সভায় ছাত্র সংগঠনগুলো এ দাবি কথা জানান।

সভায় ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপত্বি করেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সভা শেষে উপাচার্য আখতারুজ্জামান ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

জানা যায়, আলোচনা সভায় ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের দাবিসসমূহ প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেন। এসময় ভোট কেন্দ্র নিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন দাবি ওঠে। ভোট কেন্দ্র হলের বাইরে বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে করার দাবি জানায় ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা ভোটের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য ভোটকেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার দাবিও জানান। তবে ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগ হলের মধ্যেই কেন্দ্র করার দাবি জানায়।

সভা শেষে উপাচার্য আখতারুজ্জামান তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সভায় গঠনতন্ত্র ও আচরণ বিধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গঠনতন্ত্র নিয়ে যে সুপারিশ করা হয়েছে তা সিন্ডিকেট সভায় উঠবে। সেখানে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

আচরণ বিধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সে বিষয়টি দেখবেন।'

তফসিলের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে তফসিল দেওয়া হবে। আমরা ও সিন্ডিকেট সদস্যরা একটা বিষয়ে একমত যে, যারা ভোট দিতে পারবে তারা প্রার্থী হতে পারবে। আমরা নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ৩১ মার্চকে সামনে রেখেই এগোচ্ছি।'

এর আগে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রদলসহ সকল ছাত্র সংগঠনের পক্ষে থেকে মধুর ক্যান্টিন, আবাসিক হলগুলোতে সহাবস্থানের দাবি করা হয়েছে। ভোটার এবং প্রার্থিতার ক্ষেত্রে যারা ডাকসুর ফি প্রদান করে সবাইক সুযোগ দিতে হবে। এখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা করা যাবে না। ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তরের জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিশ্বাসযোগ্য করার দাবি জানানো হয়েছে।’

ডাকসুর সভাপতির (ভিসি) ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীয় করার দাবিও জানান তিনি।

ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতারা ক্যাম্পাসে আসলে আমাদের নেতাকর্মীদের বিভিন্নসময় মারধর করে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করে ছাত্রদল নিয়মিত মধুর ক্যান্টিনে যেতে চায়।’

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এখন ডিজিটাল যুগে দুর্নীতি করার সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম হল কেন্দ্রীক। তাই ভোট কেন্দ্র হলের মধ্যে করা হোক। ডাকসু নির্বাচনে নিয়মের বাইরে দুর্নীতি করে কোনো কিছু করার সম্ভাবনা নেই।'

তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সহাবস্থান আছে। কিন্তু ছাত্রদলকে ইতিবাচক ধারায় আসতে হবে। তাহলে তারা সহাবস্থান করতে পারবেন। ছাত্রদল অন্তর্কোন্দলের কারণে ক্যাম্পাস ছেড়েছে। তাদের মধ্যে যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী তারা প্রভোস্টের মাধ্যমে হলে থাকলে আমাদের সমস্যা নেই।'

বয়স নিয়ে রাব্বানী বলেন, ‘যে কেউ প্রার্থী হতে পারে। তবে তাদের বয়সসীমা ত্রিশ করতে হবে।’

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, ‘ভোট কেন্দ্র ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনে আনার জন্য প্রশাসনের কাছে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন দাবি জানিয়েছেন। আমরাও একই দাবি জানিয়েছি। একইসঙ্গে যারা ডাকসু ও হল সংসদের জন্য ফি দেন তাদেরকে ভোটার ও প্রার্থী করার দাবি জানানো হয়েছে।'

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে ভোট কেন্দ্র করার দাবি জানিয়েছি। যাতে সবার জন্য সহাবস্থান থাকে।'

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আচরণবিধি কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি যারা এই দুই কমিটিতে দায়িত্ব পেয়েছেন তারা সবাই একটা দলের। আমরা চাই সকল সংগঠনের নেতাদের পরামার্শ নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হোক।’

অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের দুই গ্রুপ, জাসদ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রমৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র আন্দোলনসহ ১৪টি ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর