ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) 'বাজেট ২০২৪: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি' শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাস রুমে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাবি উপাচার্য ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মান্নান, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট এন্ড পলিসির পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তৈয়েবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য এম এম ফজলুল হক, রিসার্চ এন্ড পলিসি ইন্ট্রিগ্রেসন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক।
এ আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারের সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মান্নান বলেন, দারিদ্র্য একদিনে গড়ে ওঠেনি। এর পেছনে সাংস্কৃতিক নানা কারণ রয়েছে। দেশের বেশির ভাগ খাত ইজারাদারদের দখলে। এমনিতেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় রাজস্ব সামান্যই আসছে সরকারের কাছে। এই রাজস্বের বাইরে প্রচুর অর্থ যাচ্ছে একটি গোষ্ঠীর কাছে। এই গোষ্ঠীকে ধরে রাখার জন্যই তাদেরকে ইজারা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
বাজেটের অর্থ অপচয় রোধের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাজেটের অর্থ কত সেটি পরের বিষয়, বাজেটের অর্থ কোথায় যাচ্ছে! সেটিই বড় বিষয়। এই অর্থ যেখানে প্রয়োজন সেসব খাতে যাচ্ছে নাকি অবৈধ খাতে চলে যাচ্ছে! এটি সরকারকে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। আলোচনা সভায় সরকারকে আরো বেশি মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'মিতব্যয়িতা বলতে খরচ কমানো বুঝায় না, সঠিকভাবে খরচ করাকে বুঝায়।' ক্ষুদ্র এ বাজেটের অর্থ মিতব্যয়ী হয়ে খরচ করলেই দেশের অবস্থার উন্নতি হতে পারে বলে জানান এম এ মান্নান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাকসুদ কামাল বলেন, 'সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি দুবাইতে বাংলাদেশিদের প্রায় ১১০০টি কোম্পানি রয়েছে। এইরকম কোম্পানিসহ বিভিন্ন দেশে নানাভাবে টাকা পাচার হচ্ছে। সরকার কাছে কি এদের বিষয়ে তথ্য নেই? তারা কি চাইলেই এসব ব্যক্তির নাম জাতির সামনে তুলে ধরতে পারেন না? অর্থ পাচার দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণ বলে মনে করেন তিনি।।
মাকসুদ কামাল আরো বলেন, 'একটি দেশের উন্নয়নের জন্য মেধা মননের উন্নতি ও গবেষণার প্রয়োজন। অথচ এবারের বাজেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা, যেগুলোর বেশিরভাগই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত। গবেষণার জন্য মাত্র ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের মাত্র ২.২ শতাংশ। মেধা মননের উন্নতির জন্য গবেষণা খাতে সরকারের বরাদ্দ বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মো. আবু ইউসুফ বলেন, উচ্চশিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, স্মার্ট ক্লাসরুম ও ল্যাব স্থাপন, আধুনিক লাইব্রেরি স্থাপন, উন্নত আবাসন ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত বেতন ভাতা, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও সমসাময়িক বিষয়ে মানসম্পন্ন গবেষণা এবং গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য বাজেট বরাদ্দ ও সঠিক পরিকল্পনা উভয়ই প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য বাংলাদেশ যে রূপরেখা প্রণয়ন করেছে তা বাস্তবায়নে এবং যে সকল লক্ষ্যমাত্রাসমূহ স্থির করেছিল সেসব অর্জনের ক্ষেত্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছর কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর বলে তিনি উল্লেখ করেন।