গ্রীষ্মকালীন ও ঈদের ছুটি শেষে রোববার (৩০ জুন) থেকে খুলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস। ছুটি শেষ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরলেও ক্লাসে ফিরতে পারেনি তারা। সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা এবং সব দাপ্তরিক কাজ বর্জনসহ সর্বাত্মক কর্মবিরতির ফলে সেশনজটের শঙ্কায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বিগত তিনবছর যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পর্যাপ্ত শিক্ষক সংকট এবং করোনা মহামারির ফলে পূর্ব থেকেই পিছিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনেক বিভাগ। এর ওপর আবার শিক্ষকদের এ আন্দোলন নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে শিক্ষার্থীদের।
অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বন্ধে সেশনজটের শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদা সুলতানা।
তিনি বলেন, চাকরির উর্ধ্ব বয়সসীমা ৩০ হওয়ায় স্নাতকোত্তর শেষে আমরা তিন থেকে চার বছর সরকারি চাকরিতে পরীক্ষা দেওয়ার সময় পাই। সেশনজটের ফলে সে সময় আরও স্বল্প হয়ে যাচ্ছে। ছেলেদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একটা মেয়েরাও চায় চাকরি করে স্বনির্ভর হয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে। কিন্তু এইসব অস্থিতিশীলতা মেয়েদের স্বপ্নপূরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আইন বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সোহাগ আলী শিক্ষকদের দাবিগুলো যৌক্তিক মনে করলেও শিক্ষার্থীদের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে বলেন, শিক্ষকগণ নিজেদের জন্য নয় বরং আগামীর শিক্ষক ও শিক্ষার মান বজায় রাখার জন্যই আন্দোলন করছেন। তাদের চিন্তাটা সুদূরপ্রসারী। প্রকৃতপক্ষে, শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় না করলে, মেধাবীরা এই পেশায় আসবে না। আর মেধাবীরা শিক্ষকতায় না আসলে সেটা জাতির ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের দিকে যাবে। একটা ভালো কাজের জন্য শিক্ষার্থীদের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। তবে, এই অবস্থার সৃষ্টি হওয়াটা দুঃখজনক। এই অবস্থার অর্থ হলো, সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তনিমা ইসলাম বলেন, করোনা মহামারির ফলে আমাদের পড়াশোনা প্রায় দেড় বছর পিছিয়ে গেছে। শিক্ষকদের এই আন্দোলন আমাদের আরও পিছিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে প্রাইভেট ও বেশ কিছু সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা পড়া শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেছেন। এজন্য মানসিকভাবে কঠিন সময় যাচ্ছে আমাদের।
আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, দাবি আদায়ে শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না দাবি আদায় হচ্ছে, আন্দোলন চলবে।
পরিস্থিতি সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু সমাধানের অবস্থা তৈরি করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। তারপরও আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক, সমস্যাটারও সমাধান হোক এবং আমাদের শিক্ষার্থীরা যথারীতি তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুক।