জাবিতে কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল

, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-07-01 18:57:54

সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়াসহ ৪ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে ছাত্র সমাবেশ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে দশ মিনিট প্রতীকী অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা।

এ সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডেইরি ফার্ম থেকে সিএন্ডবি পর্যন্ত যানযটের সৃষ্টি হয়। কোটা পদ্ধতি বাতিল না করা হলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ক্রমাগত অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন জাবির শিক্ষার্থীরা৷

শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবিত ৪ দফা দাবিসমূহ হচ্ছে- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে, ১৮' এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে, সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

শহীদ মিনারের পাদদেশে ছাত্র সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেলের সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।

এসময় সমাবেশের সঞ্চালক আরিফ সোহেল বলেন, এ আন্দোলনকে কতিপয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে বিতর্কিত করতে চায়৷ মুক্তিযোদ্ধারা কি এই কোটা পাবার জন্য যুদ্ধ করেছেন? যারা এ ধরনের কথা বলে তারাই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। 

আদালতের অসাম্য রায়ের বিরুদ্ধে আজকের সমাবেশ শিক্ষার্থীদের অবস্থান জানান দিচ্ছে মন্তব্য করে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, সংবিধানে স্পষ্ট লেখা আছে শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর জন্যই কোটা থাকবে। ২০১৮ সালে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে কোটা বাতিলের পর সম্প্রতি হাইকোর্ট এটিকে বৈধ ঘোষণা করেন। তাই আমাদের অবস্থান আগের মতই। তড়িঘড়ি করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে এটির যৌক্তিক সংস্কার জরুরি। যাতে এই বিষয় নিয়ে আর কোনো দ্বন্দ্ব অবশিষ্ট না থাকে।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে কোটা প্রথা বাতিল করতে হবে মন্তব্য করে ৪১ ব্যাচের শিক্ষার্থী খালেদ বলেন, এই অন্যায্য কোটা ব্যবস্থা অবশ্যই বাতিল করতে হবে৷ সরকারি চাকরির বয়স সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোটা ব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে৷

আগামী ৪ জুলাই এই কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা না করা হলে লাগাতার আন্দোলনসহ ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করা হবে হুঁশিয়ারি দিয়ে সমাপনী বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম বলেন, বৈষম্য দূর করার জন্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। পাকিস্তান যে বৈষম্য চাপিয়ে দিয়েছিল সেই বৈষম্য দূর করার জন্য লাখ লাখ জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই বৈষম্য কোটার মাধ্যমে আবার ফিরিয়ে এনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে। আগামী ৪ জুলাই এই কোটা বাতিল না হলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ করা হবে৷

উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট৷ এর প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে'র ব্যানারে একযোগে সারা দেশের ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দেয় তারা৷

এ সম্পর্কিত আরও খবর