সার্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয় স্কিম’ এর প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন সুপার গ্রেড ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন সহ সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে গিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষকরা।
সোমবার (১ জুলাই) থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে অচল অবস্থার মধ্যে পড়ে সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু বিভাগে পূর্বে থেকেই সেশনজট বিদ্যমান রয়েছে। এর মাঝে নতুন এই কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীরা শঙ্কিত তাদের ভবিষ্যত একাডেমিক কার্যক্রম নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী।
তাদের দাবি মাত্রই আমরা ঈদুল আজহা এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরলাম। এসেই আবার এমন একটি অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। বিভিন্ন বিভাগের সেমিস্টার ফাইনালের মতো পরীক্ষাও আটকে রয়েছে শিক্ষকদের এই আন্দোলনের মধ্যে। বিষয়টিকে অনেকে করোনা মহামারিতে পিছিয়ে পরা শিক্ষাব্যবস্থার সাথেও তুলনা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউটিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী যায়িদ বিন ফিরোজ বলেন, আমাদের চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরুর কথা ছিলো জুলাই মাসের ১ তারিখে। কিন্তু ক্যাম্পাসে এসে এখন দেখছি যে পরীক্ষা হবে না। কবে নাগাদ হতে পারে সে বিষয়েও তারা কোনো আশ্বাস দিচ্ছে না। আমাদের মতো এমন অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এই অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছে। চাইবো যেনো দ্রুত শিক্ষকরা আবার একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরে আসে। না হয় আমাদের করোনা পরবর্তী আবার সেশন জটের একটি সম্ভাবনা তৈরি হবে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনেও খারাপ প্রভাব ফেলবে।
এদিকে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ এ অন্তর্ভুক্তি নিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরল শিক্ষকরা। গত দু’মাস ধরে বিবৃতি, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় ১লা জুলাই থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন।
এবিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, আমরা শুরুতেই সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাই নি। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে চেয়েছিলাম যেনো আগেই এর সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু কোনো সুরাহা না পেয়ে আজকের এই সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছি আমরা। সারা বাংলাদেশের সকল পবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে আজকের এই প্রথম দিনের কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আমরা আশাকরি সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি আমলে নিয়ে খুব দ্রুত এর সমাধান দিবেন।
সেশন জটের আশঙ্কা নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আন্দোলনটি দীর্ঘদিন চলমান থাকলে কিছুটা সেশনজট হতে পারে। তবে আমরা শিক্ষকরা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে হলেও শিক্ষার্থীদের ক্ষতি যাতে না হয় তার চেষ্টা করবো। আমরা সরকার থেকে সমাধান পেলেই আবার পুরোদমে ক্লাস কার্যক্রমে ফিরে আসবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, এধরণের আন্দোলন বা কর্মসূচি চলমান থাকলে অবশ্যই সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হতে পারে৷ তবে শিক্ষকরা চাইলে আবার সেই ক্ষতিটুকু পুষিয়ে নিতে পারবেন। আমার শিক্ষকদের প্রতি আহবান থাকবে যখন বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে তারা যেনো এই বিষয়ে নজর দিয়ে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে সহায়তা করে।