সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী চলমান কোটা আন্দোলনে যাওয়ার অভিযোগে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে মারধর ও হল থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান হাফিজের বিরুদ্ধে।
এঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে হলের প্রভোস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে মারধরের বিচার চেয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাহফুজ। ভুক্তভোগী মাহফুজ উল হক আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ও শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ৪২০নং কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী।
অভিযোগপত্রে মাহফুজ বলেন, আমি আনুমানিক সকাল ১১টার দিকে নিজ কক্ষে পড়ছিলাম। সাড়ে ১১টার দিকে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষবর্ষের সোহান রুমের সামনে এসে ছাত্রলীগের প্রোগামে যাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করার কিছুক্ষণ পর শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান হাফিজ কক্ষের সামনে আসে এবং গতকাল রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে গিয়েছিলাম কিনা জানতে চায়। গিয়েছি জানার পর ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি আমাকে বলেন 'তুই কি রাজাকার? রাজাকার না হলে ওই মিছিলে গেলি কেন?' আমি তাকে 'রাজাকার হব কিসের জন্যে? কোনটা ব্যঙ্গার্থক আর কোনটা আসলেই সেটা তো আপনার বোঝা উচিত।' বললে কথাকাটাকাটির সৃষ্টি হয়। এরপর কক্ষে থাকা ঝাড়ু দিয়ে দুই বার আমার মাথায় সজোরে আঘাত করে। যার ফলে ঝাড়ু ভেঙে গেছে। তিনি আরও মারতে উদ্যত হলে আমাকে ডাকতে আসা সোহান এবং সৌরভ শেখ হাফিজ ভাইকে ঠেকায়। যাওয়ার সময় তিনি হুমকির সুরে বলে যান, 'ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম থেকে ফিরে যেন তোকে হলে না দেখি। যদি কেউ কিছু বললে বলবি আমার নাম হাফিজ। তোর কে আছে দেখবোনে।'
এ ঘটনায় শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শেখ এ.বি.এম. জাকির হোসেন বলেন, মারধরের বিষয়ে আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছি এবং ছাত্রলীগের দুই নেতার সাথেও আমি কথা বলেছি। তারা বলেছে যে অভ্যন্তরীণ ভাবে বিষয়টি সমাধান করে নিবে।
অভিযুক্ত সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান হাফিজ বলেন, এ ঘটনার ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। আমি তো জানতামও না যে আমি সেখানে গেছি। একটু আগে ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে আমি নাকি রুমে যেয়ে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করছি। যেখানে আমি যাই ই নাই, সেখানে আমি মারধর করলাম কিভাবে তা বোধগম্য না। আমার মানহানি করা হচ্ছে, আমি নিজেও এব্যাপারে অভিযোগ দিব।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ছাত্রলীগ যৌক্তিক কোটা সংস্কারের পক্ষে, এ আন্দোলন যাওয়ার জন্য কখনোই কাউকে মারধর করা হয়নি এবং মারধরের যে বিষয়টি ভালো হচ্ছে এ বিষয়টি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। একই সাথে স্বাধীন বাংলাদেশের কোন শিক্ষার্থী যদি রাজাকার বলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাহলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তাদের রাজপথে প্রতিহত করবে।
ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল বলেন, একটি ছাত্র সংগঠনের নামে জিয়া হলের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনার অভিযোগ এসেছে। যদি ঘটনাটি ঘটে থাকে তবে অত্যন্ত নিন্দনীয়। এর প্রতিকার বিধানে যা যা প্রয়োজন আমাদের প্রশাসন সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, সাড়ে ১১টার সময় জিয়া হলে মারধরের একটা অভিযোগপত্র পেয়েছি। আমরা বিষয়টি প্রক্টরিয়াল বডির সাথে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। আর ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আমরা অভিযোগের কপিটি ইবি থানায় দেব।