ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ঈদ-উল-আযহার ছুটির পর ১ জুলাই থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৩ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালনসহ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে বন্ধ হয়েছিল শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ফলে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ পদত্যাগ করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হলেও এখনো প্রশাসনিক (আংশিক) ও একাডেমিক কার্যক্রম চালু হয়নি।
নানামুখী সমস্যার সমাধান করতে দ্রুত উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা ও প্রশাসন) মোট ৩টি পদের শূন্যস্থান পূরণ আবশ্যিক। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়কে আগের মতো লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির কবলে যেন চলে না যায়, সে বিবেচনায় কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সরাসরি যুক্ত কোনো শিক্ষককে এসব পদে দেখতে চাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশ।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা বার্তা২৪.কম এর কাছে এসব কথা জানান। তারা দলীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত শিক্ষকদের উপাচার্য হিসেবে ঘোষণা করা হলে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাশাহুদ আহমেদ রাফিম বার্তা২৪.কম-কে জানান, ‘দলীয় ভিসি নিয়োগ হলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজনীতিকরণের ধারণা বাধাগ্রস্ত হবে। বিগত দিনগুলোতে দেখেছি, দলীয় ভিসিরা কখনোই নিজেদের ছাত্রকর্মীদের কোনো অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন না। যেখানে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ চাইছি, সেখানে দলীয় ভিসি বিলাসিতা। বুয়েটেও আমরা লক্ষ্য করেছি, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও দলীয় ভিসির কারণে শিক্ষার্থীরা বারবার নানা বাঁধার সম্মুখীন হয়েছে। তবে নির্দলীয় ভিসিকেও যেন কোনো দলের পাপেট হতে না হয়, সেজন্য একজন নীতিবান ভিসি প্রয়োজন বলে মনে করি।’
নির্দলীয় উপাচার্য চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মাইশা মালিহা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের মদদপুষ্ট শিক্ষকরা যখন ভিসি নির্বাচিত হয়, তখন তারা সরকারের উদ্দেশ্য হাসিল করে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে ভিসি হবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পরিচয় থেকে মুক্ত। কোনো দলীয় শিক্ষককে আমরা ভিসি হিসেবে চাই না। আমরা ভিসি হিসেবে একজন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও বিচক্ষণ শিক্ষককে চাই। সেই সাথে সকল ধরনের লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধের জোর দাবি জানাই।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ইতোমধ্যে কানাঘুষা চলছে সম্ভাব্য উপাচার্য ও উপ উপাচার্য পদে শিক্ষকগণ শিক্ষকদের একটি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত। এ সম্ভাবনা দেখা দিলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মাঝে। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই নির্দলীয় শিক্ষককে এ পদে দেখতে চাইছেন। এ দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আগামীকাল ভিসি চত্বরে জড়ো হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
উল্লেখ্য, এর আগে ১০ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন ঢাবির ২৯তম উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল।