ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ১১ দফা সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে অধ্যাদেশ জারি করার দাবিতে আন্দোলন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগষ্ট) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের দাবিসমূহ মেনে নিয়েছে বলে জানান বাকৃবির আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. খন্দকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে যান এবং সেখানে আলোচনা শেষে বেলা তিনটায় প্রশাসনিক ভবন থেকে আরেকটি মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদীয় সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত হন। এসময় বাকৃবির প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা সভায় বসেন শিক্ষার্থীরা। গত ২৮ আগষ্ট শিক্ষার্থীরা যে ১১ দফা দাবি জানিয়েছিল সেসব নিয়ে বাকৃবির সাধারণ শিক্ষার্থী এবং প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা হয়।
এসময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. খন্দকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যসহ অসংখ্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ।
শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে বাকৃবির আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. খন্দকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবির কাগজ পড়ে দেখেছি। আমরা তাদের দাবিগুলো মেনে নিয়েছি এবং তাদের কাগজে যা আছে হুবহু তাই নোটিশ আকারে জারি করা হবে।
এসময় শিক্ষার্থীরা ওই ১১ দফার সঙ্গে ক্যাম্পাসে গেস্টরুম কালচার, মাদক, চাদাবাজি নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে। এ দাবিটিও প্রশাসন মেনে নিবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন অধ্যাপক ড. খন্দকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
এর আগে বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেল ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়া এবং ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশ ও মিটিং-মিছিলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রশাসন সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও শিক্ষার্থীরা সেটি প্রত্যাখ্যান করে এবং ১১ দফা দাবি পেশ করে।
১১ দফা দাবিগুলো হলো-
১. আগামী ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখ রোজ রোববার হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চালু করতে হবে।
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ ও পিএইচ.ডি ডরমেটরি আগামী ৩১ আগস্ট, ২০২৪ তারিখ রোজ শনিবার খুলে দিতে হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সকল ধরনের দলীয় ও ছায়াসংগঠন ভিক্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহের সকল সিদ্ধান্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে গ্রহণ করতে হবে।
৫. অনুষদের শিক্ষা এবং গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ডিন কাউন্সিল কর্তৃক সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৬. বিগত স্বৈরাচার সরকারের এর যারা দোসর ছিল, তাদেরকে গণতদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৭. আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কোন প্রকার হয়রানিমূলক আচরণ করা যাবে না।
৮. প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে এবং তাদের কোন দলীয় পরিচয় থাকা যাবে না।
৯. বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নারী নিরাপত্তা ও নিপীড়ন বিরোধী সেল গঠন করতে হবে এবং এর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. নিরাপত্তা কাউন্সিল এর নবনিযুক্ত পরিচালক কে অপসারণ করতে হবে।
১১. বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কে সেশনজট মুক্ত করতে দ্রুততার সাথে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।