সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এর অধীন দপ্তর, অধিদপ্তর,পরিদপ্তর এবং সংবিধিবদ্ধ, স্বশাসিত, জাতীয়কৃত, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন পর্যায়ের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুয়ায়ী ন্যূনতম ৩৫ (শর্তসাপেক্ষে উন্মুক্ত) বছর করার জন্য দাবি করেছেন চাকরির বয়স ৩৫ প্রত্যাশি শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সন্ধায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। এ সময় তারা পূর্বের কার্যক্রম ও ভবিষ্যতের কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
তারা বলেন, সরকারি/বেসরকারি/আধা সরকারি/রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসহ দেশে বিদ্যমান সকল ধরনের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছরকে মানদণ্ড হিসেবে অনুসরণ করে। এমতাবস্থায় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যূনতম ৩৫ বছর (শর্তসাপেক্ষে উন্মুক্ত) করার দাবির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এমতাবস্থায় আমরা গত দিনের কাজ ও আগামী দিনের সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
গত ২৪ তারিখ বন্যা পরিস্থিতির কারণে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে মানবিক দৃষ্টি থেকে বিবেচনা করে আমরা আমাদের নির্ধারিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশ স্থাপিত করেছিলাম। সেই সাথে আমাদের চাকরিরতে বয়সসীমা বৃদ্ধির প্ল্যাটফর্ম থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছিলাম। নোবেল বিজয়ী বর্তমান অন্তরবর্তীকালীন সরকারে প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস স্যার বলেছেন দীর্ঘদিনের জমে থাকা দাবি লিখিত আকারে প্রদান করতে তাই আমরা একটি স্বারক লিপি প্রদান করেছি। এছাড়াও আসিব নজরুল স্যারকে স্বারক লিপি ও অবগত করা হয়েছে গত ২৭ তারিখে। আসিফ নজরুল স্যার বলেছেন যে পশ্চিমবঙ্গে যদি বয়স সীমা ৩৬ থাকে তবে আমাদের দেশে কেনো নয়। সেই সাথে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সাথে কথা বলবেন।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা প্রকাশ করে তারা জানান, ৩০ বা ১ তারিখে আমাদের কেন্দ্রীয় টিমের সিদ্ধান্তে সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করতে যাচ্ছি। যাতে বাংলার তরুণ প্রজন্ম জানতে পারে বয়স সীমা ৩৫ কেনো দরকার। আগামী ২/৩ তারিখে আমাদের একটা সেমিনার হবে সেখানে অফলাইনে অনলাইন সকল প্রশ্ন করতে পারবে। যেখানে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিক্ষক, সাংবাদিক থাকবে যেতে করে ৩৫ এর গুরুত্ব কতটুকু হবে উঠে আসে। অনলাইনে জুম এর মধ্যে চাইলে যে কেউ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। সেমিনারটি করা হবে।
৫/৬ তারিখে সারা দেশে ক্যাম্পেইন চলবে। প্রতিটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের, প্রতিটি কোচিং এ যাতে সকলেই মিলে ৭ তারিখে শিক্ষার্থী শান্তি সমাবেশে প্রাণের দাবিটি বাস্তবায়নবায়ন করতে পারে। ৭ তারিখে আমাদের চূড়ান্ত শান্তি সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। আমরা আশা রাখছি এর আগেই আমাদের সাথে বসে দাবিটি বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের উপদেষ্টারা আমাদের সাথে বসে এর শুরাহা করবেন। অনথায় ৭ তারিখে দাবিটি না বাস্তবায়ন করলে আমরা অবস্থান কর্মসূচিতে ধাবিত হবে যতক্ষণ না আমাদের দাবিটি বাস্তবায়ন হয়।
বর্তমান বাস্তবতা ব্যাখ্যা করে তারা বলেন, বাংলাদেশের সকল পর্যায়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আজ থেকে ৩৩ বছর আগে ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়, যখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিলো ৫৭ বছর।
বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর বিধায় চাকরিতে আবেদনের বাসসীমা বৃদ্ধি করা যৌক্তিক। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি না করে সেটি ৩০ বছরের সীমাবদ্ধ রাখা হয়। যার কারণে দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কোভিড-১৯ এর কারণে প্রায় আড়াই বছর যাবৎ তেমন কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি। উপরন্তু লকডাউন উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে প্রতি সপ্তাহান্তে ১০-১৫টি বা ততোধিক পরীক্ষা একই দিনে, একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যায় ফলস্বরূপ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে অজস্র চাকরি প্রত্যাশী। কোভিড-১৯ এর শুরুতে যাদের বয়স ২৭-২৯ বছর ছিল তাদের বয়স এখন ৩০ বা ততোধিক। ফলে চাকরি প্রার্থীগণ বাস্তবিক অর্থে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ৩০ বছরের পরিবর্তে সাড়ে সাতাশ বছর পেয়েছে। এতে করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ চাকরি প্রত্যাশীরা বৈষম্যর শিকার হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন যুব নীতিতে ১৮ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত অনুসরণ করা হয়। দুঃখের সাথে বলতে হয় যুব নীতিতে ৩৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হলেও বর্তমান উচ্চ শিক্ষিত চাকরি প্রত্যাশীদের ৩০ বছরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ১৬২টি দেশে এবং সার্কভুক্ত সকল দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা কমপক্ষে বছর, তার মধ্যে কিছু কিছু দেশে তা উন্মুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যভেদে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৪৫ বছর, মালদ্বীপে ৪৫ বছর, শ্রীলঙ্কায় ৪৫ বছর, নেপালে ৩৫ বছর, আফগানিস্তানে ৩৫ বছর। বেকারত্ব দূরীকরণ করতে ও মেধাভিত্তিক একটি উন্নত বাংলাদেশ গঠন করতে হলে শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং সেই সাথে আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করা খুবই প্রয়োজন।
বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত যুবসমাজকে মানবসম্পদ হিসেবে কাজে লাগাতে পারলে সেটি হবে যুগোপযোগী ও যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত এবং উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে কয়েক ধাপ অগ্রসর হওয়া যাবে। বিশ্বের সকল উন্নত রাষ্ট্র এই নীতি অনুসরণ করেই বেকারত্ব কমিয়েছে এবং মেধা রপ্তানি করে রেমিটেন্স বাড়িয়েছে। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর করে রাখার কারণে দেশে দক্ষ জনবল, গবেষক গড়ে উঠছেনা এবং বাংলাদেশের চাকরি প্রত্যাশীরা আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পারছেনা। আমাদের উচিত সফল ও উন্নত বিশ্বকে অনুসরণ করা। পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল, এক নাম্বার অর্থনীতি ও উদীয়মান পরাশক্তি রাষ্ট্র চীনেও চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৪০ বছর পর্যন্ত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সেশনজটের কারণে সকল সরকারি/ বেসরকারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে ২৭ থেকে ২৮ বছর লেগে যায়। যা একজন চাকরি প্রার্থীর জন্য চাকরির প্রস্তুতীতে খুব কম সময় পেয়ে থাকে। এছাড়া কোটা নীতি এবং দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে প্রকৃত মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থী পিছিয়ে পড়ে।